জীবনের ৯০টি বছর পেরিয়ে সন্জীদা খাতুনের উপলব্ধি, শিশুদের জন্য, দেশের জন্য, বাঙালি জাতির জন্য কাজ করে অর্থবহ হয়েছে তার জীবন। তার ভাষ্যে, অল্পে তুষ্ট সহজ সরল জীবনের এই সার্থকতায় আমি ধন্য হয়েছি।
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কিংবদন্তিতুল্য সন্জীদা খাতুন গতকাল মঙ্গলবার ৯০ বছর পূর্ণ করেন। গত শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুন। গতকাল তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ধানমণ্ডিতে ছায়ানট ভবনে সকালে পৌঁছানোর পর শিল্পী–সংস্কৃতিকর্মীরা এই বর্ষীয়ানকে বরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে গানে। প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নবতিপূর্ণা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সন্জীদা খাতুন। তুলে ধরেন শৈশবের জীবনবোধ, গানের সঙ্গে যোগসূত্রতার গল্প, ছায়ানট গড়ার প্রেক্ষাপট, আর এই সায়াহ্নে জীবন নিয়ে উপলব্ধির কথা। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, আমার জীবনের নব্বইটি বছর পার হয়ে গেল। আজ ভাবতে বসেছি, জীবনটাকে আমি কী রকম করে সাজাতে চেয়েছিলাম, আর বাস্তবে কী হয়েছে। ছেলেবেলায় ইজিচেয়ারের বাতিল হয়ে যাওয়া কাপড় বিছিয়ে নানীর দেখাদেখি নামাজের ভঙ্গি করতাম। আর কিছুই জানা ছিল না বলে মুখে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলতে থাকতাম। মোনাজাতে অনেক কিছু চাইতাম আল্লাহর কাছে। কিছুদিন পরেই মনে ধিক্কার এল, নিজের জন্য এটা ওটা চাইব কেন? ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে অন্য সবার মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করতে আরম্ভ করলাম। সেই থেকেই সবার ভালো চাইবার দিকে মন গেল।
সন্জীদা খাতুন বলেন, আমার মা ভিখারিকে কিছু দেবার কাজটি আমাদের দিয়ে করাতেন। বলতেন, তাতে গরিব মানুষদের প্রতি আমাদের মনে মায়ামমতা জন্মাবে। এ শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা গড়ে দিয়েছিল বাল্যকাল থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে সন্জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তিনি কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৭৮ সালে সেখান থেকেই তিনি পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে তিনি অবসর নেন।