অল্পবয়সেই বিধবা হলেন তারা

বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন, কাল হবে নিহত সন্তানদের

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

গত ৩০ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সাবেক স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুরেশ চন্দ্র শীল। সেইদিনই বিধবা হন সহধর্মিণী মৃণালিনী শীল (৬৫)। এর ঠিক দশদিনের মাথায় গত মঙ্গলবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে পাঁচ ছেলে নিহত হয়। এতে অল্পবয়সেই বিধবা হলেন তাদের স্ত্রীরা। গতকাল বুধবার দুপুরে শোকার্ত পরিবারটিতে গেলে দেখা যায়, টিনশেড বাড়ির উঠানে চলছে প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। নিয়ম ছিল সন্তানেরাই প্রয়াত বাবার এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। কিন্তু একসঙ্গে পাঁচ সন্তান নিহত এবং অপর সন্তান রক্তিম শর্মা ও কন্যা হীরা শর্মা বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া আরেক সন্তান প্লাবন শর্মাও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রয়াত বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে কোন পুত্র অবশিষ্ট না থাকায় ছোট ভাই চিত্তরঞ্জন শীল প্রয়াত বড় ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। পুরোহিত মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে সেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার সময় পাশে এক কাতারে বসে আছেন মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ ভাইসহ ৬ ভাইয়ের সাতজন স্ত্রী এবং তাদের কোমলমতি শিশুরা।
বিধবা হওয়া স্ত্রীরা হলেন-নিহত অনুপম শর্মার স্ত্রী পপী সুশীল, নিরূপন শর্মার স্ত্রী গীতা সুশীল, প্রবাসী দীপক শর্মার স্ত্রী পূঁজা সুশীল, শরন শর্মার স্ত্রী কৃষ্ণা সুশীল, চম্পক শর্মার স্ত্রী দেবীকা সুশীল। এছাড়াও দুই বছর আগে মারা যাওয়া হিরণ্ময় শর্মার দুই স্ত্রী সাকী সুশীল ও লিপিকা সুশীল।
অল্পবয়সে স্বামীহারা এসব বিধবার কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় তারা বুক চাপড়ে কান্না করতে করতে বিলাপ ধরে নানা কথাও বলতে থাকেন। স্বজনেরা তাদেরকে সান্তনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছিলেন না।
প্রাণে বেঁচে ফেরা মুন্নী শর্মার স্বামী সাংবাদিক শ্রীকান্ত খগেশ প্রতি চন্দ্র খোকন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার ক্ষৌরকর্মাদি করা হবে পিকআপ চাপায় নিহতদের স্ত্রী-সন্তানদের। এর পরদিন শুক্রবার (কাল) অনুষ্ঠিত হবে নিহতদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান ।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান নিজেই বাড়িতে গিয়ে সবার হাতে অর্থ সহায়তা হিসেবে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে তুলে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন বিষয়ে ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। এজন্য ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদরকেও দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। শীঘ্রই এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআহত অপর ভাইয়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক
পরবর্তী নিবন্ধদুই কিমি হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া