আগামীকাল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে দুইজন করে বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
ভোটের দিন যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানিয়েছেন। বিডিনিউজ
এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন মেয়র প্রার্থী এবং ৩৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৩৫টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। তাদের মধ্যে নয় লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন পুরুষ এবং নয় লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন নারী ভোটার।
মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী হলেও মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। তবে মেয়র প্রার্থীদের চেয়েও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের বিরোধে সহিংসতার শঙ্কা বেশি রয়েছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
নির্বাচনী সহিংসতায় ইতোমধ্যে দু’জন নিহত হয়েছেন।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরের সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হন একজন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও কয়েকজন।
এছাড়া গত বছরের মার্চ মাসে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও গতবারের কাউন্সিলর মোর্শেদ আক্তারের সমর্থক মো. তানভীর নিহত হন।
ভোটের আগের দিন আজ মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভোটের ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি কেন্দ্রকে তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে শনাক্ত করেছেন। শতকরা হিসেবে পুলিশের এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্রের হার ৫৭ শতাংশ।
ভোটার সংখ্যা, কেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান এবং আগের ভোটের পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার জানান, বুধবার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নয় হাজার পুলিশসহ প্রায় ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ইতোমধ্যে ফোর্সদের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি ওয়ার্ডে দু’টি করে মোবাইল টিম, প্রতিটি থানায় স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হবে নির্বাচনের দিন।
পাশাপাশি জোনাল উপ-কমিশনারদের অধীনে সাব কন্ট্রোলের মাধ্যমে এবং দামপাড়া ও মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনে স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হচ্ছে।
এছাড়াও র্যাব ও বিজিবির ২৫ প্লাটুন সদস্য টহলে থাকবেন বলে জানান সিএমপি কমিশনার।
সিএমপি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোতে ছয়জন পুলিশের পাশাপাশি ১২ জন আনসার এবং সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে চারজন পুলিশের পাশাপাশি ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এরইমধ্যে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন বলে জানান সিএমপি কমিশনার তানভীর। বুধবার নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অতীতের মতো এবারও ‘বহিরাগতরা’ এসে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এ রকম শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে বিএনপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, “যাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকবে তাদের জন্য নির্বাচন আনন্দমুখর হবে। বহিরাগতদের জন্য দ্বার বন্ধ। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কোনো বহিরাগত এসে যেন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে।”
ভোটে সহিংসতার শঙ্কা করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা যে সকল সংঘাতের আশঙ্কা করি ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ঘটনা ছাড়া পরবর্তীতে দৃষ্টি আকর্ষণের মতো বড় রকমের কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।”
তবে নির্বাচনের দিন যেকোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা কোনো মিছিল-সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনে যারা জয়ী হবে তাদের বলতে চাই, কোনো রকমের তথাকথিত বিজয় মিছিল এবং অপরপক্ষকে ঘায়েল করে কিছু করলে আমরা তাদের কঠোর বার্তা দেব।”
নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ করে আসছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে টেলিফোনও করা হয়েছে সিএমপি কমিশনারের কাছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিএমপি কমিশনার বলেন, “সকল পক্ষের জন্য আইন সমান। কমিশনের পক্ষ থেকে একবার ফোন করা হয়েছিল। আপনাদেরও বলেছি, নামের ভুলের কারণে এটা হয়েছে। সেই ভদ্রলোককে আমরা সসম্মানে ছেড়ে দিয়েছি। যে সকল আটকের কথা বলা হচ্ছে তাদের কোনো না কোনো মামলায় ওয়ারেন্ট কিংবা পুলিশি কারণে ধরা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা ব্যাপক নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা যাচাই-বাছাই করার জন্য যে কারও বাসায় যেতে পারি। কেউ বলতে পারবে না গায়েবি মামলা দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে এসেছি। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড এখানে হয়নি। সকল পক্ষের জন্য আমাদের আইন সমান। এর ফলাফলও আপনারা দেখেছেন।”