এক একটি শিশু যেন হয়ে উঠেছিল এক একজন সফল অভিভাবক। তারা যেন হয়ে উঠেছিল এক একজন সফল মানুষ। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য অভিজাত শপিং মলে শপিং করছিল তারা। ট্রলি ভর্তি বাজার। খাতা কলম, চকলেট, ওয়েফার, বিস্কুট। চাল ডাল তেল পেঁয়াজ মরিচ রসুন হলুদসহ নিত্য পণ্যে ঠাসা এক একটি ট্রলি। কেনাকাটা দারুণ উপভোগ করছিল শিশুরা। যেন পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়ে আনন্দে বাজার করছে তারা। বস্তীবাসী শিশুদের স্বপ্ন ছোঁয়ার এই আয়োজন করে পুলিশ। স্বপ্নের চেয়েও সুন্দরভাবে তারা ঘুরে ঘুরে শপিং করছিল ‘স্বপ্ন’ সুপার স্টোরে। গোলপাহাড় মোড়ের স্বপ্ন সুপার শপে গতকাল অর্ধশতাধিক শিশুর ঝোলায় এভাবেই ধরা দিয়েছিল স্বপ্ন। ধারণাটি নতুন। সিএমপির ডিসি (নর্থ) বিজয় বসাক মানবিক এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। পিতা-মাতাহীন এতিম শিশুদের জীবনের শুরুটা ভরে থাকে নানা অপূর্ণতায়। প্রতিদিনই তাদের অনেক ইচ্ছের নীরবে মৃত্যু ঘটে। নিরেট বাস্তবতায় তাদের পক্ষে সুপার শপে প্রবেশ করা সম্ভব হয় না। তাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ‘শপ উইথ কপ-খুশীর ঝুড়ি হাতে চলি পুলিশের সাথে’।
‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় পুলিশের অনুদানে গঠিত ফান্ড থেকে শিশুরা শপিং মলে গিয়ে ইচ্ছে মতো শপিং করে ঘরে ফিরে যাবে।
একাজে সহায়তায় ইচ্ছুক পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সাধ্যমত অর্থ এই ফান্ডে প্রদান করবেন। এক একজন পুলিশ সদস্য নিজের সামর্থ অনুযায়ী এক বা একাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দায়িত্ব নেবেন। শিশুর নিজের মনে যা চায় তাই কিনবেন। পুলিশ সদস্য ওই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে দেবেন। ছিন্নমূল, এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমের শিশুরা এ সেবা পাবে। সিএমপির ডিসি (নর্থ) দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে জানান, উদ্বোধনী দিনে আমরা নগরীর দু’টি এতিমখানা ও দু’টি বস্তির মোট ৬০ জন শিশুর ইচ্ছেঘুড়ি উড়িয়ে দিলাম। মাননীয় পুলিশ কমিশনারের হাত ধরে শপিং করেছেন শিশুরা। এতিম শিশুগুলোর সকালটি বেশ বর্ণিল হয়ে উঠেছিল। নগরীর ইলমুল কোরান একাডেমি, প্রবর্তক সংঘ অনাথ আশ্রম, টাইগার পাস বস্তী ও বকুলতলা বস্তিতে বসবাস করা ৬০টি শিশু নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের হাত ধরে স্বপ্ন সুপার শপে প্রবেশ করে। এসময় শিশুরা ট্রলি ভরে নিজেদের পছন্দের সব পণ্য কেনাকাটা করে। নানা পণ্য ট্রলিতে তুলে নিয়ে শিশুর দলটি উৎসবে মেতে উঠে। এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করে স্বপ্ন, বারকোড ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান যাত্রী ছাউনি। নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) এস এম মোস্তাক আহমদ খান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।