অর্থ পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

| রবিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য সহায়তা নিতে ১০ দেশের সঙ্গে আইনগত সহায়তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন২০১২ জারি করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নউত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থ পাচার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ বলবৎ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এটি সংশোধিত হয়। এই আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূভাবে বিদেশে পাচারকে মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এর অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা (এর মধ্যে যা অধিক) অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদনের পর ওই কৌশলপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।

আসলে দেশে থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বিগত অনেক বছর ধরেই তা চলছে এবং দিন দিন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেই অর্থ পাচার যেমন বন্ধ করা যাচ্ছে না, তেমনি পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনারও কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধগুলো বিশ্বের যেসব দেশে সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে; দেখা যাচ্ছে, সেখানে দুদকের মতো দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোই মূল ভূমিকা পালন করেছে। মানি লন্ডারিং আইনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা দুদকের হাতে থাকাকালীন ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনায় দুদকের সাফল্য থাকলেও পরে এ বিষয়ে সাফল্যের আর কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি। এ অবস্থায় দুদকের ক্ষমতা ও আইনি কাঠামো যে আরও সম্প্রসারিত করা দরকার, তা বলাই বাহুল্য।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থ পাচার একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন সাধনে এ সমস্যা রোধ করতে হবে। এ জন্য সরকারি কৌসুলীদের সোচ্চার হতে হবে, ভূমিকা রাখতে হবে। এ সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারে অধিকতর আন্তরিক হতে হবে।

এ কথা বলা বাহুল্য যে, আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁরা বলছেন, উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আবশ্যিকভাবেই কয়েকটি বিষয়ের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসব মৌলিক উপাদানগুলো নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাহত হতে পারে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা গতিশীল রাখতে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দেশের টাকা দেশে থেকে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ ধরনের পদক্ষেপ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি না পারছে অর্থ পাচার রোধ করতে, না পারছে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে, না পারছে নিজের চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করতে। দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, অথচ তা রোধ করা যাচ্ছে না, এটা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, অবৈধভাবে অর্থ পাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ অর্থ পাচারকারীদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। অর্থ পাচার রোধে অবশ্যই পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ উদ্যোগ সফল হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে