অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত রোগীর জীবন বাঁচাবার তরে যুদ্ধ করি

আজ বিশ্ব কিডনি দিবস

সৈয়দ মোহাম্মদ জাহেদুল হক | বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

১৮ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। মরণব্যাধি কিডনি রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি বছর অগণিত মানুষ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে। প্রিয়জনকে বাঁচাতে মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসার পেছনে ছুটতে বাধ্য থাকে ভুক্তভোগী পরিবার। বাস্তবে আমৃত্যু চিকিৎসার ভার সইবার সাধ্য ধনী, মধ্যবিত্ত বা হতদরিদ্র কারোই নেই। ফলে রোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য মৃত্যুই যেন মুক্তি। এমন বাস্তবতায় আমাদের অদম্য প্রত্যয় ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’। কিডনি রোগের দুষ্প্রাপ্য, ব্যয়বহুল চিকিৎসায় ভুক্তভোগী এবং নির্মম বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে অর্থাভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত হতদরিদ্র কিডনি রোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের বুকফাটা বোবাকান্না ও নির্মম কষ্টের আওয়াজ সরকার, সামর্থ্যবান ও মানবিক সমাজকে জাগ্রত করে সর্বজনীন সহযোগিতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে জীবন রক্ষার প্রয়োজন বোধ থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা’। ইতোমধ্যে কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পেয়েছে।

কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা নিবন্ধন অর্জনের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে স্বাস্থ্যসেবায় এক অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে ‘আরশে আজিমের মালিক’। ফলে করফহবু চধঃরবহঃ ডবষভধৎব অংংড়পরধঃরড়হ গবফরপধষ ঈড়সঢ়ষবী প্রতিষ্ঠাই আমাদের সকল প্রচেষ্ঠায় মূল কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে ১. জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী: কিডনি সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি আমাদের প্রধান কাজ। সচেতনতার মাধ্যমে কিডনি বিকলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে সূত্রে প্রকাশ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ খাদ্যাসক্তি, ব্যথা নাশক ও ভেজাল ঔষধ সেবন ইত্যাদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যবলীর আলোকে জনসচেতনতা বাড়ানো আমাদের দৈনন্দিন কর্মসূচী। ২. চিকিৎসা ব্যয় কমানোর প্রচেষ্টা: কিডনি বিকল দিয়ে এ রোগের শুরু মরণে তার শেষএর নামই কিডনি রোগ। মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত ব্যয় বহুল চিকিৎসার ভার সইবার সাধ্য ধনী গরীব কারোরই নেই। ফলে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য রোগী। তাই চিকিৎসা ব্যয় কমাতে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব, চিকিৎসক, ডায়ালাইসিস সর্বক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় রোগীর সামর্থের অনুকূলে আনতে সংস্থার রয়েছে নানাবিধ প্রচেষ্টা।

() রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মানবিক চেতনায় জাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সামর্থবান নাগরিকের মানবিক সহযোগিতা এর প্রধান উৎস। বিশেষ করে ১০ কোটি টাকার এফ.ডি.আর এর মুনাফার টাকায় ব্যয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডায়ালাইসিস ব্যয় হতদরিদ্র রোগীদের সাধ্যের মধ্যে আনা সম্ভব।

উল্লেখ্য যে, কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস খরচের যোগান একটি জীবনমরণ সমস্যা। প্রতি মাসে একজন রোগীর ৮ টি, ক্ষেত্র বিশেষে ১২ টি ডায়ালাইসিস সহ ডাক্তার ভিজিট, প্রয়োজনীয় টেস্ট, রক্ত শূন্যতা পূরণে ইনজেকশন, হাসপাতাল ডাক্তার দৌড়ঝাপযাতায়াত খরচ, এবং নানা ধরনের ইনফেকশন মিলে একজন রোগীর মাসে ৫০ হাজারেরও অধিক খরচ যোগান দিতে গিয়ে পথে নামতে বাধ্য হয় হাজারো ধনী পরিবার। হতদরিদ্রদের পক্ষে এমন ব্যয় সামলানো কতটা কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও সর্বস্তরের মানবিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগে ১০ কোটি টাকার এফ.ডি.আর. এর মুনাফার টাকায় চট্টগ্রামের সকল ডায়ালাইসিস রোগীর বাই রোটেশান চট্টগ্রামের সকল রোগীর ডায়ালাইসিস ব্যয় মেটানো সম্ভব। ফলে অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। ব্যয়ের ভারে পথে নামা থেকে রক্ষা পাবে হাজারো পরিবার। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা ও কষ্ট নিরসনে এই উদ্যোগ অসামান্য অবদান রাখবে।

() ডায়ালাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ: কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ওঈট সমৃদ্ধ ডায়ালাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাম মাত্র মূল্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রধানের লক্ষ্যে ডায়ালাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার ১ম প্রকল্প।

() আমদানি শুল্ক মওকুফ : এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় কমানো একটি অন্যতম উপায়। জীবন রক্ষাকারী সকল মেডিসিন, মেশিনারীজ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচা মাল আমদানি নির্ভর। ফলে আমদানি শুল্ক মওকুফ এর আবেদন নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রাণপণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। চিকিৎসা সেবা সর্বসাধারণের সাধ্যের মধ্যে সহজলভ্য করতে আমদানি শুল্ক মওকুফের কোনো বিকল্প নেই।

() স্বাস্থ্য সেবা হোক পুণ্যময় ইবাদত তুল্য : স্বাস্থ্য সেবা আখের গুছানোর অবলম্বন না হয়ে আখেরাত কামায় এর উৎস হলে সেক্ষেত্রেও চিকিৎসা ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস পাবে। সকল ধর্মানুসারে মানব সেবাই পরম ধর্ম। নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ খাত আখের ঘুচানোর অবলম্বন না হয়ে আখেরাত কামায়ের আমলে পরিনত করা গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম মুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চিকিৎসা খাতে আনবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

() রাষ্ট্র, প্রাইভেট ও পাবলিক অংশীদারী উদ্যোগ : রাষ্ট্র, প্রাইভেট ও পাবলিক অংশীদারি উদ্যোগে দেশে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় কমানোর দীর্ঘ মেয়াদী সুফল পাবে দেশের সাধারণ মানুষ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর অনুরূপ আপামর জনতার অর্থায়নে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠায় সরকারের জন্যও কষ্টসাধ্য হবে না এবং সর্বসাধারণের উপরও টেক্সের অতিরিক্ত বোঝা চাপবে না। বিনিময়ে দেশের মানুষ দেশেই উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। চিকিৎসাখাতে হাজারলক্ষকোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোগ্যপণ্য : ক্রেতারা অসহায়
পরবর্তী নিবন্ধগান চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ ও একজন জহির রায়হান