আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্তভাবে আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের যে সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন করেছে, দেশটির সরকারও তাতে সহমত প্রকাশ করেছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ–সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের সঙ্গে বৈঠকে এমন বক্তব্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তার সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, উনারা শুধু বলেছেন, এনডিআই–আইআরআই যে সুপারিশগুলো করেছে, এটাতে উনাদের এনডোর্সমেন্ট আছে, অনেকটা অ্যালাইনমেন্ট আছে। তবে ওই সুপারিশগুলোর ব্যাপারে সরকার কী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বা নিতে হবে, সে ব্যাপারে বৈঠকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি বলে জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ সফর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপসহ ৫ দফা সুপারিশ সম্বলিত একটি বিবৃতি দেয় ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রাক–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। ওই বিবৃতি প্রকাশের পরদিন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আফরিন আক্তারের বৈঠকে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন আয়োজন এবং ওই প্রতিনিধিদলের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। এনডিআই–আইআরআইয়ের সুপারিশের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা যে সুপারিশগুলো দিয়েছেন, সে ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানও অনেকটা একই রকম। এবং তারা যেটা চাচ্ছে, যে আগামী নির্বাচনটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক এবং সেটা যাতে সংঘাতমুক্ত হয়। এ ব্যাপারে তাদের যে অবস্থান আছে, সেটাই পুনর্ব্যক্ত করেছে।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যে প্রতিশ্রুতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন প্রতিনিধিদলকে দেওয়া হয়েছে, তা বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু আমাদের বলার ছিল না। আমরা শুধু বলেছি যে, যদি এনডিআই–আইআরআই তাদের পর্যবেক্ষক পাঠায়, তাহলে ইলেকশন কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যতটুকু করার আছে ফেসিলিটেশনের, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
বাংলাদেশ সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিনিধিদলের অবস্থানকে সমর্থন করছে কিনা, এমন প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা এখনও অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া দিইনি। আর তাছাড়া, নির্বাচনের বিষয়টা যেহেতু অনেকখানি নির্বাচন কমিশনের, তারাই এটা দেখবে। সুতরাং তারাও এটা দেখেছে, তাদের নজরেও আনা হয়েছে নিশ্চয়ই। প্লাস এটা বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির নজরেও নিশ্চয়ই এসেছে। সুতরাং তারা তাদের কাজগুলো করবে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এটা দেখছি এখন, সেই রকম এই মুহূর্তে এটার ব্যাপারে মন্তব্য নেই।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরব অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় ওয়াশিংটন। আর তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ভিসানীতি চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারীদের’ বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
র্যাবের সাতজনের নিষেধাজ্ঞা আগে তোলার অনুরোধ : বাংলানিউজ জানায়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা তোলার আগে সম্ভব হলে বাহিনীটির সাত কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলেছি। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে র্যাব ইস্যুতে আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি ল’ ফার্মের মাধ্যমে। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত ব্যক্তি বিশেষ যেসব নিষেধাজ্ঞা আছে যেন তুলে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ব্যক্তি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়বে এবং একটা সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, এতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তারা।
ব্যক্তি বিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, র্যাব বাহিনীর সংস্কারের ইস্যুগুলো তো সময় লাগবে। ওদের যে লিগ্যাল প্রসেস আছে, ওটার ওপর দিয়ে আমরা এগোচ্ছি। যদি কোনো সুযোগ থাকে, ইনস্টিটিউশনের জন্য সময় লাগবে বা দেরি হবে, সেটার জন্য ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আগে তুলে নিলে সেটা সহজ হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে আগে তুলে নিল বা ইনস্টিটিউশনেরটা তুলে নিল। যেটা আগে আসে সেটাই আমরা করব।