অর্থবছরের শেষ দিনে ছাড় আড়াইশ’ কোটি টাকা

বিল পাবেন ঠিকাদাররা, থমকে যাওয়া কাজে গতি সঞ্চারের আশাবাদ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে আটকে পড়া বিল বাবদ গতকাল আড়াইশ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। অর্থবছরের শেষ দিনে এসে সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রকল্পের কাজ করেও বিল না পাওয়া ঠিকাদারদের প্রাণে পানি এসেছে। এর ফলে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া এই মেগা প্রকল্পের কাজে পুনরায় গতিশীলতা তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে শহর। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতাই চট্টগ্রাম মহানগরীর এক নম্বর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময় বহু আলাপ আলোচনা হলেও এর থেকে নগরবাসীর নিস্তার মিলছে না। ভয়াল জলাবদ্ধতার কারণে শহরের একটি বড় অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ ও সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল সংস্কার, খনন এবং সম্প্রসারণ ছাড়াও খাল দখল করে থাকা প্রায় ৩ হাজার ১৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ রয়েছে। খাল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ২৪০ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার, খালের পাড়ে ১৭৬ কিলোমিটার রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, খালগুলোর এক পাশে ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা এবং অপর পাশে ৫ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত পাঁচটি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালে নেয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জুনে প্রকল্প মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। সরকার এক বছর মেয়াদ বাড়ায়। এতে করে আগামী ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছিল। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার প্রকল্প মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়েছে।
সেনাবাহিনী বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক মাস ধরে প্রকল্পটি আর্থিক অনটনে পড়ে। বিশেষ করে করোনাকালে প্রকল্প ব্যয় যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কাটছাঁট করা হয়। প্রকল্পের অর্থ যোগান দেয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করে। পুরো অর্থবছরে এই প্রকল্পটির জন্য দেওয়া হয় ৪৩০ কোটি টাকা। কিন্তু কাজ করানো হয় অনেক বেশি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকল্পটির কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলা হলেও সরকার টাকা যোগান দিয়েছিল ১৭শ’ কোটি টাকার মতো। এতে আর্থিক যোগান ছিল ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। এতে করে কাজ করেও বহু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিল পাচ্ছিল না। সময়মতো বিল না পাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো হাত গুটিয়ে নিয়েছিল। এতে কাজের গতি বেশ কমে যায়। এই অবস্থায় সিডিএর পক্ষ থেকে প্রকল্পটিতে অর্থ যোগান দিতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আবেদন করা হয়। সিডিএর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের ৪৩০ কোটি টাকার সাথে গতকাল নতুন করে আরো ২৫০ কোটি টাকার যোগান দেওয়া হয়। গতকালই এই টাকা সিডিএ বরাবরে প্রদান করা হয়েছে। সিডিএ সেনাবাহিনীকে টাকা প্রদান করলে আটকে পড়া বিল পাবেন ঠিকাদারেরা। এতে থমকে যাওয়া কাজে নতুন করে গতি সঞ্চার হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া একটি প্রকল্প। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সরকারের জন্য বেশ বিব্রতকর একটি বিষয়। সরকার চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেল, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের একটি শহর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অথচ মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতে শহরের বড় একটি অঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। সরকার এই দুর্ভোগের অবসান চায়। তিনি বলেন, সরকার তাই প্রকল্পটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অর্থবছরের শেষদিনেও জরুরিভিত্তিতে টাকার যোগান দিয়েছে। তিনি এই প্রকল্পে গত অর্থবছরের বরাদ্দ হিসেবে গতকাল আড়াইশ’ কোটি টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানান। তবে সরকারের আড়াইশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্ষমতায় থাকতে আমলাদের শক্তিশালী করার কৌশল নেয় সরকার : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধগণপরিবহন বন্ধ, ক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ