অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবীলায় এগিয়ে আসতে হবে

| সোমবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষে এখন সবার চোখ একদিকে। সেটা হলো নতুন সরকার বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মোকাবেলা করবেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি কীভাবে রোধ করবেন? কেননা নতুন সরকারের কাছে বাজার সিন্ডিকেট হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন এভাবে রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা : ‘সিন্ডিকেট দমন করা কি সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে? নাকি আগের বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিই বহাল থাকবে? বাজারের অত্যাচার থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে খোলাবাজার নীতিচাল, ডাল, তেল সস্তায় সারা বছর সরবরাহ করার ব্যবস্থা চালু রাখা হবে আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এক কোটি পরিবারকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে প্রতিদিন দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ছে হাজার হাজার লোক। রাজস্ব সংকটের মধ্যেই আবার বাড়াতে হবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। এটাও বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক নতুন সরকার তা কীভাবে মোকাবিলা করে।’

বলা বাহুল্য যে, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক সিদ্ধান্ত আটকে ছিল নতুন সরকারের আগমনের অপেক্ষায়। নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে নতুন সরকারকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

এর মধ্যে অর্থনীতির যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন হবে, তার মধ্যে রয়েছেমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস করা, রাজস্ব আয়, ব্যাংক খাত, মুদ্রা বিনিময় হার, ব্যাংক ঋণের সুদের হার প্রভৃতি। কাঁরা বলেন, নতুন সরকারের সর্বপ্রথম গুরুত্ব আরোপ করা উচিত হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার ওপরে। দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সামপ্রতিককালে দেশিবিদেশি চক্রান্তকারীদের অপতৎপরতায় দেশের অর্থনীতিকে মোটামুটি সচল রাখা পোশাকশিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা লক্ষ করা গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত করে কতিপয় সুযোগসন্ধানী পোশাকশিল্পেও অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। বিগত কয়েক মাস ধরে পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ঢাকার দুটি বিশেষ অঞ্চলে নারকীয় তাণ্ডব, শিল্প কারখানায় আক্রমণ, গণপরিবহন ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কতিপয় শ্রমিক নামধারী উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির মারমুখী আচরণ এ শিল্পকে ধ্বংসের অশুভ পাঁয়তারা ছাড়া কিছুই নয়।

দেশে হরতালঅবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেও নানা কৌশলে পোশাক কারখানাগুলো চালু থাকলেও ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সময়মতো কাপড়এঙেসরিজের পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কমেছে পোশাকের উৎপাদন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, একের পর এক হরতালঅবরোধে পণ্য আমদানিরপ্তানি কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হঠাৎ করেই বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে ২৫৩০ শতাংশ এবং পোশাকের মূল্যও কমিয়ে দিয়েছে ২০২৫ শতাংশ। বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ৪০৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা অতীতেও নানা রকম সংকটে পড়েছেন। তবে এখন একসঙ্গে যতগুলো সংকট এসেছে, তা অতীতে কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি শিল্প মালিকদের।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে রিজার্ভরেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাই হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আসলে অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাটাই হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলেন, “এখন যেহেতু আর বিশেষ কোন নীতি সংস্কার হবে না, তাই এখন দ্রব্যমূল্য, মুদ্রা বিনিময় হার ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে ব্যাংক বা কোন খাতে যেন কাঠামোগত সংকট না হয়। আবার বৈদেশিক দায় দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোন সমস্যা তৈরি না হয়।” তাঁরা বলছেন, আর্থিক খাতে সুশাসন আনা এবং শুরুতেই বর্তমান বাজেটের আকার অন্তত এক লাখ কোটি টাকা কমিয়ে টাকাকে আকর্ষণীয় করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে নতুন সরকারকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে