দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রকাশের কমিটি গঠনের পর এটির কাজ এবং এতে কী কী থাকবে তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এটা দুর্নীতি ধরার কমিটি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১২ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে দেওয়ার পরদিনই গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সভা করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। খবর বিডিনিউজের।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন কমিটির প্রধান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, অনেকের কাছে ধারণা হয়েছে, এই কমিটি বোধহয় দুর্নীতি ধরার কমিটি, আমি আপনাদের পরিষ্কার বলে দিতে চাই এটা দুর্নীতি ধরার কমিটি না। এটা হল, দুর্নীতি কেন হয়েছে এবং দুর্নীতির মাত্রা কী সেটা বলবে। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে, কেন করেছে এটা বলা আমাদের দায়িত্ব না। এটা বলার জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে। এ কমিটি মূলত সামষ্টিক অর্থনীতি ও খাতভিত্তিক অর্থনীতির অবস্থা এবং সামনের দিনের জন্য মতামত তুলে ধরবে বলেও জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় বলেন, আমরা এখানে (কমিটিতে) বিশ্লেষক, নীতি বিশ্লেষক এবং বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে মতামত দেব। যে সমস্ত নীতিমালা চলছে, সেই নীতিমালা আমরা মূল্যায়ন করব। পূর্ববর্তী সরকারও কিছু নিয়ম ও নীতিমালা তৈরি করেছে, সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা এবং আগামী দিনের নতুন নীতিমালা করার ক্ষেত্রে কী হবে অথবা পূর্বের অবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য রক্ষাকবচ কী হবে এইগুলো আলোচনার ভেতরে থাকবে।
কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কমিটি কোনো বিশেষ প্রকল্প বা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়েও কাজ করবেন না। বরং অর্থনীতির অবস্থা বোঝার জন্য কোনো প্রকল্প সামনে চলে এলে বা ঋণখেলাপির মত বিষয় এলে তার মূল্যায়ন ও একই ধরনের পুনরাবৃত্তি সামনের দিনে না হওয়ার মতামত দেবে। একই সঙ্গ কমিটি গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের কাজেরও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবে না বলেও তুলে ধরেন তিনি।
কমিটির মূল কাজই হচ্ছে ভিত্তিভূমি নিরূপণ বলে তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে উনাদের এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করার প্রতিবন্ধকতাগুলো উপলব্ধি করা এবং পরবর্তী পদক্ষেপকে উনারা যদি রূপায়ন করতে চান তাহলে প্রথমেই বোঝা দরকার কোন ভিত্তিভূমির ওপর ওনারা দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের মূল কাজ হচ্ছে এই ভিত্তিভূমিকে নিরূপন করা, মূল্যায়ন করা এবং তথ্য–উপাত্ত দিয়ে এটাকে উপস্থিত করা। আমাদের এটিই কাজ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয়ের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের এ কমিটি গঠন করার কথা বুধবার জানায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। কমিটিতে আরও ১১ জনকে সদস্যকে করা হয়েছে; তাতে প্রাধান্য পেয়েছে অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষকরা।
কমিটির প্রধান এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শ্বেতপত্রটি একটি অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে অনুশীলন। এটা স্বচ্ছতার অনুশীলন। এই স্বচ্ছলতার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার উপলব্ধি করবে তারা কী ধরনের উত্তরাধিকার নিয়ে অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্ব তারা পেয়েছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, এই ভিত্তিভূমি বা এই চ্যালেঞ্জের ঘটনাগুলো কেন হল এই আলোচনাটি আপনারা করবেন?