অর্থনীতির বহুমুখী সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে

| রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে অর্থনীতির অভূতপূর্ব উন্নতি না হলেও পতন ঠেকানো গেছে বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে সেই পতন ঠেকানো গেছে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতিও আছে। তবে অর্থনীতিতে পুরো স্বস্তি এখনো ফেরেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ছয় মাসেও নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যায়নি। বেড়েছে প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার শতাধিক পণ্যে শুল্ককর বাড়ানোয় এ চাপ কিছুটা বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতি খারাপ হতে শুরু করেছিল মূলত ২০১৯ সাল থেকে। মাঝখানে দেখা দেয় কোভিড১৯ মহামারি। এরপর ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপদে পড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। তবে দেশে সংকট বেশি প্রকট হয়েছে আগের সরকারের একের পর এক ভুল ও খামখেয়ালি নীতির কারণে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই তখন নিম্নমুখী ছিল। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই অর্থনীতিতে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে এর সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশায়ও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্থনীতির ক্ষতগুলো সারাতে সামনের দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর কৌশল নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো বহুমুখী বলে তুলে ধরে সিপিডি তিন ধাপে পরিকল্পনা করারও পরামর্শ দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির চলামান অবস্থা তুলে ধরতে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৪২৫, সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সিপিডি এমন পরামর্শ দিয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির পুঞ্জীভূত সমস্যা গত ১৫ বছরে কোন পর্যায়ে গিয়েছে সেটি তুলে ধরা হয়। এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই মাসের সফল আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে সিপিডি। আগের সরকারের সময়ে অর্থনীতি দুর্বল ছিল বলে মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সামনের দিনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সংস্কারের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর কৌশল নিতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ কৌশলগুলো এমন হবে যে, অর্থনীতির তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করবে। পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে তাদের জন্য মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের সূচনা করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির পূঞ্জীভূত সমস্যা তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি উচ্চ চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্বল রাজস্ব আহরণের ফলে আর্থিক সংকুলান না হওয়া, বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের অত্যাধিক নির্ভরতা, জ্বালানি তেলের সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্য, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস ইত্যাদি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে একটি নেতিবাচক অবস্থা নিয়ে গেছে। অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জগুলো বহুমুখী মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থ্যানের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনীতির এই বহুমুখী সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা। এই বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ফাহমিদা খাতুন। তিনটি ধাপে পরিকল্পনাটি করা যেতে পারে বলে পরামর্শ এসেছে তার কাছ থেকে। এর মধ্য প্রথম পর্যায়ে জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন ফাহমিদা খাতুন। দ্বিতীয় ধাপে অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে টেকসই সংস্কার বাস্তবায়ন করা এবং চলমান রাখা। তৃতীয় পর্যায়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা, প্রান্তিক এবং নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষায় একটি সমন্বিত পদ্ধতি দরকার বলে তুলে ধরেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের নিজস্ব উৎপাদন এবং অর্থনীতি সংকীর্ণ হওয়ায় রিজার্ভের অনেকাংশ এই প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। তবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে