গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ৬.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এই মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২০ মিলিয়ন ডলার বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। এনবিআর রিয়েল টাইম শিপমেন্টের তথ্যের ভিত্তিতে ইপিবি এই তথ্য প্রস্তুত করেছে বলে বুধবার (০৯ অক্টোবর) বিকেলে তার কার্যালয়ে মাসিক রপ্তানি আয় পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এ কথা জানান। এখন থেকে ইপিবি প্রতি মাসে রপ্তানি আয়ের বিশদ বিশ্লেষণ নিয়ে আসবে, বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইপিবি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর– প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫.০৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১.৩৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের থেকে ১০.৮২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
তৈরি পোশাকশিল্প (আরএমজি) এই তিন মাসে ৫.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে ৯.২৯ বিলিয়ন ডলার অর্জন করে বৈদেশিক বাজারে প্রধান্য অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে, নিটওয়্যারের রপ্তানি ছিল ৫.২২ বিলিয়ন ডলার, যার বর্ধিত প্রবৃদ্ধি ৫.৭২ শতাংশ, ওভেন পোশাক ৪.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা ৪.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একমাসে রপ্তানি আয় ২.৭৮ বিলিয়ন ডলার। এটি সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
নানামুখী সংকট চলছে এখন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। আগে আর্থিক খাতে সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা থাকলেও বৈদেশিক খাত ছিল শক্তিশালী। কিন্তু এখন বৈদেশিক খাতও দুর্বল বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি এসেছে। এমনকি রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে তুলনামূলক।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, যাকে বলা হয়ে থাকে রেমিট্যান্স, তা আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। অর্থনীতিবিদরা বলেন, জাতীয় বাজেটের প্রায় এক–তৃতীয়াংশেরই জোগান আসে রেমিট্যান্স থেকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি হলো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। রেমিট্যান্সই ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের প্রধান অংশ। আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদেশে কর্মরত এদেশের লাখো মানুষের অর্জিত অর্থ তাদের পরিবারকে যেমন করছে দারিদ্র্যমুক্ত, তেমনি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন করছে। সুতরাং প্রতিটি প্রবাসী কর্মী তার পরিবার ও রাষ্ট্র উভয়েরই সম্পদ। এদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর সে জন্যই বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের উন্নয়নে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হয়। তবে, রেমিট্যান্স বাড়াতে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে ডলার সরবরাহও কমে যাবে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থাকলে রিজার্ভও কমে যাবে। তবে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকার কারণে আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যমান সংকট থেকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বেরিয়ে আসতে হলে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে এবং দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠাতে হবে। আর তাতে ডলার সরবরাহ বাড়বে। মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে বিকল্প পথ বা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাতে সংকট নিরসন হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
তবে অর্থনীতির উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পর, বাংলাদেশের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে চাহিদা তৈরি হবে নতুন পণ্যের। অর্থনীতির আকারও বড় হবে। সরকারের নেওয়া নানা অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে। তখন পণ্য পরিবহন, বন্দরের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এ সবকিছুকে বিবেচনা করে আগামী দশকে অর্থনীতির চাহিদার সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।