করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের অর্থনীতি এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে এর প্রভাব আরো মারাত্মক। ভাইরাসের বিস্তার যত বাড়ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও তত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলেছে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮% থেকে দুই বা তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে।
মহামারীর এই দু:সময়ে যখন আমাদের অর্থনীতির সব খাত নড়বড়ে, তখন একটি খাত অর্থনীতির চাকা সচল করে রেখেছে। তা হলো রেমিট্যান্স। বিদেশে কর্মরত কোন নাগরিক বা ব্যক্তি যখন তার উপার্জিত অর্থ নিজের দেশে প্রিয়জনের কাছে স্থানান্তর করে, তখন তাকে রেমিট্যান্স বলে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়ন তথা অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। সারা বিশ্বে পাঁচকোটির ও বেশি লোক অভিবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশী অভিবাসী এক কোটির ও উপরে। সেই হিসাবে অভিবাসীর তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে নবম স্থানে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স এর অবদান মোট জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশের মত। যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেক। তৈরি পোশাকের পরে অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স এর অবদান সবচেয়ে বেশি।অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সদ্য সমাপ্ত ২০১৯ -২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।দেশীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।এর আগে কোন অর্থ বছরে এত অর্থ দেশে আসেনি।২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।এছাড়া ২০১৯ -২০ অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথম বারের মত ৩৬ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ৬০০ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করেছে। নতুন অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাই মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।রেমিট্যান্স এর উপর ভর করেই পদ্মা সেতুসহ আরো বড় বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রবাসীদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করেই গঠন করা হয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে তাদের মজুরি নিয়ে আসতে পারে এবং তার দ্বারা তারাও তাদের পরিবার দেশে বিদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে সেজন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সমুন্নত রেখে ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে, তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেশকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গড়ে তোলেন।
জীবনযাত্রার মান, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে রেমিট্যান্স। অথচ দেখা যায় পরিবার ও জন্মভূমিকে সুখে রাখতে গিয়ে নিজেই সুখের বৃত্ত থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টের মূল্যায়ন আমাদেরকেই করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রবাসী শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিভাবে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো যায় তার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে জনশক্তি রপ্তানি খাতের সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। পেশাজীবী ও দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের পাশাপাশি তাদের পাঠানো অর্থ সঠিকভাবে উৎপাদন ও বিনিয়োগে নিয়োজিত করতে হবে। পাসপোর্ট এর সমস্যা, দালালদের উৎপাত এবং বিমানবন্দরের ভোগান্তি দূর করতে হবে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।