অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

| বৃহস্পতিবার , ৯ জুন, ২০২২ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপো এলাকা ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল সাংবাদিকদের বলেন, গত রবিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে কাজ করছে। ডিপোতে এসে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। কারণ এলাকাটা অনেক বড়। প্রায় ২৬ একর জায়গায় ডিপোটি। এখানে কনটেনারের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। কনটেনারগুলো একটির পর আরেকটি লাগানো ছিল। কনটেনারগুলো নিচে নামিয়ে কাজ করতে সময় লাগে। তিনি বলেন, জ্বলন্ত কনটেনারের পাশে কিছু ভালো কনটেইনার ছিল। সেগুলো আমরা পৃথক করে রেখেছি। যাতে আগুনটা আর না বাড়ে এবং ক্ষয়ক্ষতি না হয়। আগুন প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এখান থেকে আর কোনোভাবে আগুন ছড়ানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল।

এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় এক হাজার কোটিরও বেশি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা ১৪শ’ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার আমদানিকৃত বহু কাঁচামালও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন এবং বিস্ফোরণে কন্টেনার ডিপোর ভিতরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মাঝে পণ্যভর্তি প্রায় ১২শ’ টিইইউএস কন্টেনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএম কন্টেনার ডিপোতে থাকা পণ্যভর্তি দেড় হাজারেরও বেশি কন্টেনারের ৯৫ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো কন্টেনার দুমড়ে মুচড়ে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা বেসরকারি এই কন্টেনার ডিপোর ধারণক্ষমতা ৭ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। এর মধ্যে ঘটনার সময় এই ডিপোতে ৪ হাজার ৩শ’ টিইইউএস কন্টেনার ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার টিইইউএস খালি কন্টেনার, যেগুলোতে পণ্য বোঝাই করা হতো। অপরদিকে ১ হাজার ৩শ’ টিইইউএস কন্টেনার ছিল পণ্য ভর্তি। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রায় ৫শ’ কন্টেনার ছিল আমদানি পণ্য বোঝাই এবং প্রায় ৮শ কন্টেনার ছিল রপ্তানি পণ্য বোঝাই। বিএম কন্টেনার ডিপোর ম্যানেজার বলেছেন, পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলোর মধ্যে ৪৫০টিতে আমদানি এবং আটশ কন্টেনারে রপ্তানি পণ্য ছিল। মূলত তৈরি পোশাক ও খাদ্যপণ্যই রপ্তানির জন্য কন্টেনারে বোঝাই করা হয়েছিল। অন্যদিকে, বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার বলেছেন, আমদানি রপ্তানি মিলে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। এর বাইরে কন্টেনার ডিপোর অন্তত ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিজিএমইএর একটা তথ্য পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। সেই অনুযায়ী, ২৮ পোশাক কারখানার ৩০ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৪ পিস পোশাক আগুনে পুড়ে গেছে, যার রপ্তানি মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯২ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৫ কোটি টাকা।

কয়েকজন পোশাকশিল্পমালিক জানান, এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাকেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

আমাদের কারো কোনভাবেই এমন বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা কাম্য হতে পারে না। হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনা রীতিমত উদ্বেগজনক। এ দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারা এ ঘটনার জন্য দায়ী, তা উঠে আসবে তদন্তে। এ দুর্ঘটনায় যদি কারো হাত থাকে, অর্থাৎ নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার সুষ্ঠু বিচার সবার কাম্য। দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবক্ষেত্রে দুর্ঘটনার বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে