অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দেশে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তিনি নিজে একজন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ। তাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা তাঁর জন্য অন্যতম দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে এখন কী করা দরকার, বিশেষজ্ঞরা তাঁকে কী পরামর্শ দিচ্ছেন কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো কেমন ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ করছে, সেব্যাপারে তাঁর সরকারকে অবহিত হতে হবে।

যদিও অন্য অনেকের মতো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিংহ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হবে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পথ তৈরি করে দেওয়া। একই সঙ্গে নতুন করে যাতে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে আমরা জানি, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের বেশি। ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ; কিন্তু এর পরও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পাননি। সামপ্রতিক অস্থিরতা দেশের পোশাক খাতকে বড় একটি নাড়া দিয়েছে। সহিংসতার সময় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে পোশাক কারখানা আছে সাড়ে তিন হাজার। দেশের বার্ষিক সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। বিশ্বের শীর্ষ খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার বাংলাদেশ। সামপ্রতিক অস্থিরতার মধ্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হুলা গ্লোবাল জানিয়েছে, কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশের বদলে অন্য দেশে দিয়েছে তারা।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তরুণদের যে অভ্যুত্থান হলো, তার মূল কারণ হলো বেকারত্ব। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছেন; যদিও শিক্ষার নিম্নমান ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে তরুণদের কর্মক্ষমতা কম। এই বাস্তবতায় তরুণেরা নিজেদের বঞ্চিত ও প্রতারিত বোধ করতেন; সেখান থেকেই অভ্যুত্থানের প্রেরণা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০এর নিচে। বিষয়টি এত দিন জনসংখ্যাগত সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বিশ্লেষকেরা এখন বলছেন, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান না হলে এই সুবিধা অভিশাপে পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই বাস্তবতায় দেশের তরুণদের এই অভ্যুত্থান বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন।

অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান সেভাবে হয়নি। তাঁদের ভাষ্যমতে, এটা হলো কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। তাই বিদ্যমান বাস্তবতায় মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তা না হলে বঞ্চনা ও প্রতারিত হওয়ার বোধ তরুণদের বুকের মধ্যে আগের মতোই ধিকিধিকি জ্বলবে।

ডয়চে ভেলে বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। দেড় বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বলা যায়, দুই বছর ধরে দেশের মানুষের ক্ষোভের মূল কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কলকারখানা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের মূল লক্ষ্য হলো, অর্থনীতি পুনরায় পুরোপুরি সচল করা। তারা বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কথা বলেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেশ কিছুদিন থেকেই বলা হচ্ছে যে আমাদের অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ আছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বৈদেশিক, এর সমাধান কিছুটা আমাদের আওতার বাইরে। আমাদের দেশীয় কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলোর সমাধান আমাদের আওতার মধ্যেই। তাঁরা বলেন, আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো হচ্ছেমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভক্ষয়, জ্বালানি সমস্যা, ব্যাংকিং সমস্যা, রেমিট্যান্স সমস্যা এবং আরো অনেক অর্থনৈতিক সমস্যা।

এ অবস্থায় সরকারের উচিত অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়া। এদের সহযোগিতা ও পরামর্শ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহস দেবে নিঃসন্দেহে। না হয় সমস্যা থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে