কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান নিখোঁজ হয়েছেন ৮ দিন হলো। অলৌকিক কিছু না ঘটলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তার পিতা সাকিব হাসান বলছেন, আমার ছেলে ফিরে আসবে আমার বুকে। আমার বুকের মানিক জীবিতই আমার বুকে ফিরে আসবে। সাগর হয়তো আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে–এই আশায় আমি অপেক্ষা করছি। সমুদ্রপাড়ে সাংবাদিকদের কাছে বারবার এই আশার কথাই বলে যাচ্ছিলেন তিনি। ছেলের অপেক্ষায় থাকা মধ্যবয়সী পিতা সমুদ্রের পানে অপলক চেয়ে প্রহর গুণছেন। ৮ দিন ধরে নাওয়া–খাওয়া ভুলে গেছেন। একমাত্র সন্তান অরিত্রের মা–বাবার ক্ষণ কাটছে সমুদ্রপাড়ে ঘুরে ঘুরে। এখন এই স্থানে তো একটু পর ছুটছেন অন্য স্থানে। একটাই আশা–বুকের ধন ফিরবে বুকের মাঝে।
অরিত্রের মা জেসমিন আক্তার বলেন, আমি মা, আমার একমাত্র নাড়িছেঁড়া ধন। তাকে সমুদ্রে রেখে আমি কীভাবে বাড়ি ফিরি? আমার মানিক না ফিরলে আমি ফিরব না। আমি প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে।
মায়ের চোখে ঘুম নেই। দৃষ্টি আটকে আছে সাগরের ঢেউয়ের দিকে। তিনি বলেন, ছেলেটা আমাদের একমাত্র সন্তান। খুব যত্ন করে বড় করেছি। মেধাবী ছিল। তার দুই বন্ধুর লাশ পেয়েছি, কিন্তু আমার অরিত্রকে এখনো পাইনি। যতদিন না ছেলেকে পাব ততদিন কক্সবাজার ছাড়তে পারব না। ওকে এই অথৈ সাগরে ফেলে রেখে বাসায় ফিরব কীভাবে?
নিখোঁজের দিন থেকে কক্সবাজারে আছেন অরিত্র হাসানের মা–বাবা, চাচা–চাচিসহ অনেক আত্মীয়–স্বজন। সবাই প্রতিদিন সমুদ্রপাড়ে ঘুরছেন আর অরিত্রকে খুঁজছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই কাটছে তাদের সময়।
অরিত্রের বাবা বলেন, আমার ছেলে আর না ফিরলেও তার কাছ থেকে আলাদা হব না। আমরা ছেলেকে বুকের সাথে আগলে রাখব। আমি মনস্থির করেছি, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি বাসা নিয়ে তার ছায়ায় জীবন কাটিয়ে দেব। আমার ছেলের ছায়া থেকে দূরে গেলে আমি থাকতে পারব না।
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে পাঁচ বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরতে আসেন। ৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে হিমছড়ি সৈকতে তিন বন্ধু অরিত্র, সাদমান ও আসিফ সাগরে গোসল করতে নামেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঢেউয়ে ভেসে যান তারা। সাদমানের মরদেহ পরে সৈকতে এবং আসিফের মরদেহ একদিন পর নাজিরারটেক পয়েন্টে ভেসে আসে। কিন্তু অরিত্রের খোঁজ এখনো মেলেনি। অরিত্র হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বগুড়া জেলার বাসিন্দা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ওয়াটার বাইক, স্পিডবোট ও ড্রোনের সাহায্যে ইনানী, হিমছড়ি ও এমনকি সোনাদিয়ার চর এলাকাসহ আশপাশের উপকূলে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলমের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশ, বিচকর্মী, লাইফগার্ড সদস্য ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা মিলে যৌথভাবে প্রতিদিন তল্লাশি চালাচ্ছে।
তল্লাশি অভিযানে থাকা সি সেইফ সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, অরিত্রের নিখোঁজ থাকা আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। তাই আন্তরিকতার সাথে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূল ও নদীর মোহনায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কোনোভাবে জীবিত উদ্ধার না হলে এতদিন সে বেঁচে নেই। আর সাগর মৃত মানুষের দেহ কখনো আটকে রাখে না; ফিরিয়ে দেয়। অতীতে এ রকম অনেক ঘটনা দেখেছি। কিন্তু অরিত্রের সন্ধান কেন মিলছে না বুঝতে পারছি না। আশা করছি পেয়ে যাব।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, স্পিডবোটে করে মহেশখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলজুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর ড্রোন দিয়ে সাগরেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও অরিত্রের সন্ধান মিলছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।