বর্ষা নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের অপূর্ব সব সৃষ্টি মনের খোরাক মেটায়। কবি জসিমউদদীন পল্লীবর্ষা কবিতায় কী চমৎকার ছবি এঁকেছেন। করেছেন বৃষ্টি বন্দনা। কিন্তু বর্ষা এলেই যেন চট্টগ্রামে বেজে উঠে দুর্ভোগের করুণ সুর। শুনতে না চাইলেও এ সুরের অসুরতা দুর্বিষহ করে তোলে শহরের পথঘাটে থাকা চাটগাঁবাসীর জীবন। জলাবদ্ধতা বিষফোঁড়ার মতো ভোগায় নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে না এলেও এ নিয়ে দায়িত্বশীলদের একে অন্যকে দোষারোপের ব্লেইম গেম থেমে থাকে না। কুৎসিত এ কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে আমজনতাই নোংরা হয় কেবল কাদা লেগে। কারণ যারা ব্লেইম গেমে থাকেন তাদের সবারই আলাদ আলাদা গাড়ি আছে। চলাচলের জন্য চরণ মাটিতে না পড়লেও চলে। সাধারণ জনগণের সে উপায় নেই। জীবনের টানে, জীবিকার আবশ্যকতায় তাদের বের না হয়ে উপায় নেই। বর্ষা আসলেই যেন ভোগান্তির ষোলকলা পূর্ণ হয় চট্টগ্রাম শহরে। শুধু ভোগান্তিই নয়, বর্তমানে এটি আতঙ্কেও রূপ নিয়েছে। খোলা ম্যানহোলে পড়ে জীবননাশের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত আমাদের প্রিয় চাটগাঁ শহর। একটু বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া যেন নিয়তিই হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম এর। ছাত্রছাত্রী আর শ্রমজীবী মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ যেন কারো টনক নড়াতে সক্ষম হয় নি। বছরের পর বছর ধরে চলছে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ। কোনো কোনো এলাকায় ঘরে এবং দোকানপাটে পানি উঠেও দুর্ভোগের ষোলকলা পূর্ণ করে। তিন পোল এবং চকবাজার এর জলজ্যান্ত উদাহরণ। নজরকাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে সারা দেশে। চট্টগ্রামেও হচ্ছে। বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবুও চাটগাঁবাসীর শঙ্কা, এত উন্নয়নের জয়যাত্রার মধ্যেও আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতায় সব স্বপ্ন আবারো জলাবদ্ধ হবে নাতো একটু ভালো থাকার সব আয়োজন? নাকি অতীতের মতোই এবারো বর্ষাকাল কাটবে দুর্ভোগে দুর্ভোগে? এতো এতো অভিভাবক থাকার পরও দুর্ভোগের করুণ সুরে বিষিয়ে উঠবে নাতো নগরবাসীর জীবন?