অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করতে হবে

| রবিবার , ৩১ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এ অনাকাঙ্ক্ষিত রেল দুর্ঘটনা। তুলনামূলক দুর্ঘটনা কম ও ভ্রমণ আরামদায়ক বলে রেলে ভ্রমণের প্রতি যাত্রী সাধারণের পক্ষপাত বেশি। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রেলের সুনামকে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৯ জুলাই) বেলা দেড়টার দিকে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশনে ঢোকার মুখে রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী জানান, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ওই লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার মুখে খৈয়াছড়াগামী একটি পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস লাইনে উঠে পড়ে। সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে আটকে যায়। ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে থামে ট্রেনটি।’ মীরসরাইয়ের ইউএনও মিনহাজুর রহমান জানান, হাটহাজারী থেকে আসা ওই মাইক্রোবাসে মোট ১৪ জন ছিলেন। খৈয়াছড়ায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। এছাড়া দুইজনকে আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরোহীদের মধ্যে কেবল একজন অক্ষত আছেন বলে জানান ইউএনও। নিহতরা সবাই প্রায় তরুণ বয়সী। এতগুলো সম্ভাবনাময় প্রাণ অল্প মুহূর্তেই ঝরে গেল। অথচ রেলক্রসিংটিতে কোনো সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। যার কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, রেল দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে লেভেল ক্রসিং গেটে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্য বলছে, দুর্ঘটনার অধিকাংশই হয় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে। রেলের হিসাবে ২০১৪-২০২০ সাল পর্যন্ত রেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ে। রেলে দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়, তার ৮৩ শতাংশই রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। এর কারণ হচ্ছে, সারা দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত। অর্থাৎ ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ নেই। আর বাকি যে ১৮ শতাংশ ‘সুরক্ষিত’ ক্রসিংয়ের বেশির ভাগই চলছে দিনমজুরি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের লোক দিয়ে। ফলে সময়মতো প্রতিবন্ধকটি নামানোর দায় খুব বেশি নেই। রেলের পরিসংখ্যানে সারা দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১। এর মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ২৪০। অননুমোদিত ক্রসিং ১ হাজার ৩২১।
অভিযোগ আছে, ক্রসিংগুলোর প্রতি রেলের নজরদারি নেই। নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তাই এসব ক্রসিংয়ে যানবাহন চলাচলের সময় ব্যারিকেড দিতে দেখা যায় না, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব রয়েছে। এমনকি এসব ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোনো মাথাব্যথাও নেই। তাছাড়া রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় বিভিন্ন যানবাহন ও জনসাধারণের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব কাজ করায় অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে এসব প্রাণহানি ঘটে। অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে,এসব ক্রসিং নিরাপদ করার বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারে নেই। রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানরা যেন তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে সে ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্যণীয়।
রেলক্রসিংয়ে দিনের পর দিন দুর্ঘটনা ঘটে চলবে আর সেটা বন্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ কেউ নেওয়া হবে না-তা নিতান্তই দুঃখজনক। এর দায় তো রেল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
শুনেছিলাম, লেভেল ক্রসিং কমিয়ে আনতে নেওয়া হয়েছিল ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ। এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে; ভবিষ্যতে সড়ক নির্মাণের সময় যাতে ওভারপাসের বিধান রেখেই পরিকল্পনা করতে পারে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, এলজিইডিসহ সরকারিসংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। লেভেল ক্রসিং গেট কমিয়ে আনা, গেটের মানোন্নয়ন, কোনো কোনো স্থানে ওভারপাস নির্মাণ জরুরি- এসব বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে রেলওয়ে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু রেলওয়ের সেই উদ্যোগের অগ্রগতি কতদূর তা জানা যায় নি। তবে দেশের অরক্ষিত ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে জরুরিভিত্তিতে ওভারপাস তৈরি করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে