অরক্ষিত অংশেই দুর্ঘটনা, দায়ী ছিল রিকশাচালকও

১৮ এপ্রিল হিজরা খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু শেহরিজের মৃত্যু তদন্ত প্রতিবেদনে ৮ কারণ চিহ্নিত, ৩৪ সুপারিশ

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৯ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

খালে বাঁশের তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনীর একটি অংশ খুলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করায় উক্ত অংশটি অরক্ষিত ছিল। ওই অরক্ষিত অংশেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া সেখানে কোনো ধরনের দুর্ঘটনাঝুঁকির সংকেত বা চিহ্ন ছিল না। এতে রাতের অন্ধকারে রিকশাচালক ও অন্যান্যদের পক্ষে দুর্ঘটনার মাত্রা সম্পর্কে বুঝতে পারা কঠিন। তাই কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা ঝুঁকির সংকেত অথবা চিহ্ন না থাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে’।

নগরের চকবাজার কাপাসগোলায় হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু আনাবিয়া মেহেরিন শেহরিজএর মৃত্যুর জন্য এভাবে ‘অরক্ষিত খাল’ও ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে কোনো চিহ্ন না থাকা’কে দায়ী করেছে এ ঘটনায় গঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তদন্ত কমিটি। গত রোববার সন্ধ্যায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিটির আহ্বায়ক ও চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। প্রতিবেদনে শেহরিজের মৃত্যুর জন্য ৮টি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়।

এছাড়া ২৯ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদনে নগরের খালনালায় পড়ে হতাহত রোধে ৩৪টি সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে সিটি মেয়রের নেতৃত্বে ‘মনিটরিং বডি গঠন’সহ ৪টি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে একটি সেন্ট্রাল হেল্পলাইন চালু এবং নিরাপত্তা বিধানে চসিকের মাধ্যমে প্রকল্পগ্রহণসহ ১০টি স্বল্পমেয়াদী, রাস্তার পাশে নালার গভীরতা বৃদ্ধিসহ ৪টি মধ্য মেয়াদী পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি খাল, সড়ক, আবাসন ও জলাশয়সমূহ নিয়ে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নহ ১৬টি দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের একটি গবেষণার বরাতে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরে বর্ষা মৌসুমে তিনটি প্রধান সমস্যা রয়েছে। এগুলো হলজলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস ও খাল ও নালায় পড়ে মৃত্যু। ২০১৭ থেকে চলতি বছর (২০২৫) পর্যন্ত নগরে নালা ও খালে পড়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আধুনিক সভ্য সমাজে নালা ও খালে পড়ে মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় দৃষ্টি না দেয়ায় এই সমস্যা নিয়মত দুর্ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে চকবাজার কাপাসগোলা নবাব হোটেলের পাশে হিজরা খালে যাত্রীসহ একটি রিকশা পড়ে যায়। স্থানীয় এবং পথচারীরা তাৎক্ষণিক রিকশার যাত্রী উম্মে সালমা ও তার শাশুড়ি বিবি আয়েশাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু নিখোঁজ হন মা সালমার কোলে থাকা ছয় মাসের শিশু শেহরিজ। নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর পরদিন সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে চামড়ার গুদাম এলাকায় চাক্তাই খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় ২১ এপ্রিল চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনকে আহ্বায়ক এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেলকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কমিটির আকার বৃদ্ধির করে ১১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। বর্ধিত কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চুয়েটের শিক্ষক, স্থপতি ইনস্টিটিউট, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, সিডিএ ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি রাখা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করব। প্রতিবেদনে খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার কথা বলা হয়। ইতোমধ্যে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে অস্থায়ীভাবে বাঁশের বেষ্টনী দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় স্ল্যাব দিয়েছি। সচেতনতার জন্য প্রচারণা চালিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদি যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে।

উদ্ধারের চেষ্টা করেনি রিকশাচালক! : শেহরিজের মৃত্যুর জন্য হিজড়া খালের দুর্ঘটনাকবলিত স্থানটি অরক্ষিত থাকাসহ মোট ৮টি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়। অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছেরিকশাচালকের অদক্ষতা ও অসচেতনতা, সড়কের অপ্রশস্ততা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে কোনো চিহ্ন না থাকা, বৃষ্টিপাত, পর্যাপ্ত জনবল ও উদ্ধার সামগ্রীর অভাব, খালনালা বর্জ্য দ্বারা পূর্ণ থাকা ও সচেতনতার অভাব।

প্রতিবেদনে রিকশাচালকের ভূমিকার বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র উঠে আসে। এতে শেহরিজএর মৃত্যুর জন্য রিকশা চালকের অদক্ষতা ও অসচেতনতার বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, যাত্রী বারবার রিকশাচালককে রাস্তার ডানপাশ ঘেঁষে চালাতে অনুরোধ করলেও তিনি শুনেননি। আবার দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের উদ্ধার করার চেষ্টা না করে রিকশার উপর ভর দিয়ে উঠে পালিয়ে যান। এতে রিকশাটি একেবারেই ডুবে যায় এবং সব যাত্রী স্রোতে ভেসে যায়। চালক আরেকটু সতর্ক হলে প্রাণহানি এড়ানো যেতো। এছাড়া শহরে রিকশা প্রয়োজন হলেও যত্রতত্র ও অদক্ষ চালক দ্বারা তা চালিত হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন আজাদীকে বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে খালের পানি ফুলে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় খাল ও রাস্তার প্রকৃত গতিপথ বোঝা মুশকিল ছিল। রাস্তার ডানপাশে ভবন এবং বামপাশে খাল থাকায় নিহত শেহরিজএর মা নিরাপত্তার স্বার্থে রিকশাচালককে রাস্তার ডানপাশ ঘেঁষে চালানোর জন্য তিনবার অনুরোধ করেন। কিন্তু রিকশাচালক তাতে কর্ণপাত করেননি। আবার রাস্তাটির ঢালু অংশে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চালক তার আসন থেকে নেমে রিকশাটি হাতে টানার কথা থাকলেও অনুরোধ অগ্রাহ্য করে তিনি তা আসনে বসেই চালাচ্ছিলেন। ফলে রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ তার জন্য সহজ ছিল না। চালকের অদক্ষতা এবং অসচেতনতার কারণে হিজড়া খালের শুরুতে যে অংশটিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না তার শেষ প্রান্ত দিয়ে রিকশাটি খালে পড়ে যায়।

তিনি বলেন, রিকশাটি খালে পড়ে যাওয়ার পর অর্ধডুবন্ত থাকলেও তৎক্ষণাৎ রিকশাচালক যাত্রীদের তোলার চেষ্টা করেননি। বরং রিকশার উপর ভর দিয়ে তিনি রাস্তায় উঠে পালিয়ে যান। রিকশাচালকের ভরে রিকশাটি খালে সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়। এসময় মা উম্মে সালমা অজ্ঞান হয়ে গেলে শিশু শেহরিজ তার হাত থেকে ছুটে যায়। তখন স্রোতের কারণে রিকশায় থাকা উম্মে সালমা এবং শিশুটির দাদী বেগম বিবি আয়েশা ভেসে যান। এর পরপর খালে থাকা ইউটিলিটি পাইপে আঘাত পেলে উম্মে সালমার জ্ঞান ফিরে আসে। তাকে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটি খালের স্রোতে ভেসে যায়।

দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণ : প্রতিবেদনে বলা হয়, খালে বাঁশের তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনীর একটি অংশ খুলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করায় উক্ত অংশটি অরক্ষিত ছিল। ওই অরক্ষিত হিজড়া খালেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া সেখানে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা ঝুঁকির সংকেত বা চিহ্ন ছিল না। এতে রাতের অন্ধকারে রিকশাচালক ও অন্যান্যদের পক্ষে দুর্ঘটনার মাত্রা সম্পর্কে বুঝতে পারা কঠিন। আবার বৃষ্টিপাতের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, বৃষ্টির কারণে ঘটনাস্থল কাপাসগোলার হিজড়া খালে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে সড়কের সমতলে পৌঁছায়, যা দুর্ঘটনার জন্য একটি প্রাকৃতিক কারণ।

এ ছাড়া ঘটনাস্থল সংলগ্ন সড়কটি খুবই অপ্রশস্ত, ঢালু ও সরু। এটির প্রস্থ ১০১২ ফুট, যা অপর্যাপ্ত। তাই সড়কটি নির্মাণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সন্দেহ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কটির পাশের ভবনগুলোও নির্মাণের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ভবন নিমার্ণ আইন (সেট ব্যাক, রাস্তা থেকে জায়গা ছেড়ে বাড়ি নিমার্ণ) মানা হয়নি। এই সংকীর্ণ সড়কে ঘন আবাসিক এলাকা থাকায় এখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ব্যাপক চলাচল রয়েছে। খাল সংলগ্ন সড়কটি আরেকটু প্রশস্ত হলে হয়তো বা দুর্ঘটনাটি এড়ানো যেতো।

প্রতিবেদনে ‘খালনালাসমূহ বর্জ্য দ্বারা পূর্ণ থাকাকেও মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, শেহরিজের মরদেহ পাওয়া যায় ঘটনাস্থল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালের বর্জ্যের স্তূপের মধ্যে। নগরবাসী নালানর্দমাখালে বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এধররের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে হলে নালাখালের মধ্যে বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সরবরাহ লাইন উন্মুক্তকরণ নিরুৎসাহিত করতে হবে।

এ ছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ‘দ্রুত পর্যাপ্ত উদ্ধারকর্মীর অভাবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর প্রায় ১৪ ঘণ্টা শেহরিজকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৭ থেকে চট্টগ্রাম শহরে নালা ও খালে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দুঘর্টনায় উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও সামগ্রীর ব্যাপক অভাব লক্ষণীয়।

মনিটরিং বডি গঠনের সুপারিশ : দুর্ঘটনায় হতাহত রোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের অংশ হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিডিএ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার সমন্বয়ে সিটি মেয়রের নেতৃত্বে ‘মনিটরিং বডি’ গঠনের সুপারিশ করা হয়। কোন সংস্থা কী কাজ করবে সেটা নির্ধারণও করে দেয় তদন্ত কমিটি। বলা হয়, এই কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর নির্ধারিত কাজগুলোর অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে এবং একটি পাবলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, যাতে জনসাধারণ ও গণমাধ্যম কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারে।

এছাড়া তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে কুইক রেসপন্স টিম গঠন, নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন এবং চলমান ও ভবিষ্যৎ উন্মুক্ত খাল ও নালা সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পে নিরাপত্তার ব্যবস্থা অর্ন্তভুক্ত করতে সুপারিশ করা হয়।

নিতে হবে নিরাপত্তা প্রকল্প : বর্তমানে যেসব নালায় বেষ্টনী নেই এবং নালার পাশের স্থানে যানবাহন ও জনগণের চলাচলের ব্যবস্থা আছে সেখানে দ্রুততার সাথে বেষ্টনী নির্মাণ করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এটি স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এক্ষেত্রে নালা ব্যারিয়ার নির্মাণ প্রকল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ, খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণ, বিদ্যমান ৫৭টি খাল খননের পাশাপাশি অবশিষ্ট খাল পুনরুদ্ধারে পৃথক প্রকল্প, সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণ, স্মার্ট ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক, জলাধার ও পুকুর সংরক্ষণ, সামাজিক সচেতনতা ও নাগরিক সম্পৃক্ততা, ডেটা ম্যানেজমেন্ট ও হটস্পট মনিটরিং প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ড্রেন পুনঃনির্মাণ প্রকল্প নিতে বলা হয়।

স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে চসিকের নগরপরিকল্পনা ইউনিট সমৃদ্ধ করা, সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে একটি সেন্ট্রাল হেল্পলাইন চালু, আইন ও নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগ ও নিয়মিত এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা ও অদক্ষ চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনারও সুপারিশ করা হয়।

খালকে জলপথ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে : মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে নগরের খালগুলোকে জলপথ হিসেবে ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, যেসব খালে পানি প্রবাহ থাকে সেসব খালে মটর চালিত নৌকার চলাচল শুরু করতে হবে। খালগুলো যখন ব্যবহার করা হবে তখন আর কেউ খালে ময়লা ফেলবে না। এক্ষত্রে চাক্তাই খালের মুখ থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত নৌকা চলাচলের উপযোগিতা রয়েছে। একইসাথে রাজাখালী খাল ও মহেশখালেও চলাচল শুরু করা যেতে পারে। এতে খালের নাব্যতা থাকবে এবং খালগুলো ব্যবহারের আওতায় আসবে। পর্যায়ক্রমে বাকি খালগুলোও এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এছাড়া মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে সিল্ট ট্র্যাপ তৈরি, ফুটপাতে ঢালাই স্ল্যাব দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া রাস্তার পাশে নালার গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, অনেক রাস্তার পাশে ফুটপাত রয়েছে এবং ফুটপাতের নিচে নালা রয়েছে। সেই নালার তলদেশ ও রাস্তা সমতলে অবস্থিত। ফুটপাত উঁচু হওয়ায় মনে হয় যেনো নালাটি অনেক বড়। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এতে রাস্তার পানি কখনো নালাতে প্রবেশ করে না। উপরন্তু নালার পানি রাস্তায় নেমে আসে। তাই ফুটপাতের নালার গভীরতা বাড়তে হবে।

প্রয়োজন সমন্বিত নগরপরিকল্পনা : দুর্ঘটনারোধে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে সমন্বিত নগরপরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, খাল, সড়ক, আবাসন ও জলাশয়সমূহ নিয়ে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এই মাস্টারপ্ল্যান নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে হালনাগাদ করা উচিত। ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে জোনভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং দল গঠন করতে হবে, যেখানে প্রতি বছর পর্যবেক্ষণ ও হালনাগাদের ব্যবস্থা থাকবে। নগর অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিবেচনায় নিয়ে জলাবদ্ধতা রোধে ভূউপরিভাগের ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। জলাবদ্ধতা ‘হটস্পট’ নির্ণয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ডাটা সংগ্রহ ও এনালিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।

এছাড়া নগর সরকার বাস্তবায়ন, খাল পুনরুদ্ধার, খাল সার্ভে করা, ফুটপাত সংস্কার, পাহাড় কাটা বন্ধ, অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির জন্য প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, পুকুর জলাশয় ভরাট বন্ধ, কালর্ভাট উঁচু করা, খালের নিচ থেকে সার্ভিস লাইন স্থানন্তর করা, ব্যারিকেড নির্মাণ, গলি ও সড়কের আলোকায়ন করা, ফাইবার বোটের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয় দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে গুলি করে মহিউদ্দিনকে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধকোনো দেশের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি না : ফখরুল