১৯৮৯ সালে বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এক বিধবার হাতে একটি শিম বিচি এটাও একটা পুঁজি’। অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ উক্তি আমি আর খুঁজে পাইনি। আমি অমর্ত্য সেন, হাল আমলের টমাস পিকেটি সহ পৃথিবী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদদের পড়েছি। কিন্তু এরকম উক্তি আর পাইনি। চট্টগ্রাম চেম্বার যখন ৯০্থর দশকে জার্মান ফেডারেশন অব স্মল বিজনেস/ টেকনো এশিয়া (সিঙ্গাপুর) প্রজেক্ট শুরু করি তখন বারবার বলা হতো, Foreign Direct Investment (FDI) এর চাইতে নিজস্ব যে সম্পদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশীয় যে শিল্প এখানে আলাদা কলসাল্টেন্সি, কনসালটেন্টি নিয়োগের বাড়তি খরচ নেই। সেজন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি, কুটির ও মহিলা শিল্প উদ্যোক্তাদের আন্দোলন চিটাগং চেম্বার–ই শুরু করেছিল।
চেম্বার প্রেসিডেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী) তার মেয়াদকালে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ শিল্পের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার’। এই বিষয়ে তিনি দুদিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারের আয়োজন করেন।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্যে দেশীয় সম্পদের সৎ ব্যবহারের লক্ষ্যে, চেম্বার জুলাই ৮৮ইং এর শেষ সপ্তাহের দিকে একটি ওয়ার্কশপ বা কর্মশালা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দেশীয় সম্পদের প্রায় ৭টি বিষয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই কর্মশালায় খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও দেশবরণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত ওয়ার্কশপে আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে গৃহীত সুপারিশমালা একটা জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের নিকট নীতিমালা প্রণয়নের নিমিত্তে পেশ করা হয়। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচার–প্রকাশনা ইত্যাদির মাধ্যমে একে আমরা একটি সুশৃংখল ও পদ্ধতিগত, পর্যায় ক্রমিক আন্দোলনে নিয়ে গিয়েছিলাম।
২.
সেই সময়ের বছরগুলোতে ঘোষিত আমদানীনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী পুঁজির ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে মফস্বল ও অনুন্নত অঞ্চলের ব্যবসায়ীগণ আমদানি বাণিজ্য থেকে প্রায় বিলীন হতে চলেছে। তাই আমি মনে করি ব্যবসা বাণিজ্য তথা অর্থনীতির মূল পরিচালিকা শক্তি এইসব ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার দিকে সরকারের দৃষ্টি নিবন্ধ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, উপজেলা বা গ্রামমুখী সরকারি পদক্ষেপ সমূহ ঠিক তখনই সফল হবে যখন মফস্বলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। তাই ক্ষুদ্র, মাঝারী ও মফস্বলের ব্যবসায়ীদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান আমদানী নীতি অবাধ, তথা সবার জন্য উন্মুক্ত। ফলে যেকোনো আমদানি কারক অনুমোদন যোগ্য পণ্য যে কোন পরিমাণে আমদানী করতে পারে সুতরাং আমি মনে করি পূর্বে প্রচলিত নির্দিষ্ট পণ্য আমদানীর সিলিং যা ইতিপূর্বে প্রচলিত ছিল তা পুনঃপ্রবর্তন করা উচিত এবং সেটা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি সংরক্ষিত তালিকা অনতিবিলম্বে প্রণয়ন করাও হয়েছিল। এই সংরক্ষিত তালিকার পণ্যসমূহ রেজিস্ট্রার্ড বাণিজ্যিক আমদানীকারকদের তাদের স্ব স্ব পাস বুকের মাধ্যমে আমদানীর বিধান রাখার নিয়ম চালু হয়েছিল। এর সুফল হিসেবে ক্ষুদ্র ও স্বল্প পুঁজির আমদানীকারকগণ আমদানী বাণিজ্যে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এবং আমদানী বাণিজ্যে শৃংখলার উন্নতি ঘটেছে। একুশে ডিসেম্বর, ১৯৮৭ সনে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শদাতা কমিটির সভায়ও আমরা এ প্রসঙ্গে সদাশয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম উক্ত সভায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধান কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতঃ তা আগামী আমদানী নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর বাস্তবায়ন দাবী করা হয়েছিল।
৩.
আমাদের গার্মেন্টস শিল্প যখন থেকে শুরু হয়েছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এই শিল্পে যেসব সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় তা স্থানীয়ভাবে তৈরির পরিবেশ গড়ে তোলা এবং এর উন্নয়ন এর লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের আয়ের এক–চতুর্থাংশ থাকছে কাঁচামাল আমদানির জন্য। বাদবাকি সিংহভাগ এর ২৫ ভাগ থাকলে ৭৫ ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশে কারণ এক্সেসরিগুলো আনতে হচ্ছে। যার ফলে আমরা তখন অর্থাৎ ৮৭ সালে বলেছি, আড়াই লাখ জনশক্তি কর্মরত আছে এর ভ্যালিডিটি যদি আমরা বাড়াতে চাই ৫০–৭০ শতাংশ বাড়াতে বাড়াতে বিশাল এক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেইসাথে পারমিট প্রথা বাতিল এবং এক্সপিয়াল পদ্ধতি পুনরায় প্রবর্তন, ফিশ রিসোর্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর বিষয়েও আমরা সার্বিক দাবী জানিয়েছিলাম।
৪.
বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য একটা সবচেয়ে বড় মাইলফলক যে দুদিনব্যাপী ১৭–১৮ মে ১৯৮৯ সালে Maximum Utilization Internal Resources অনুষ্ঠানটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ হোটেল আগ্রাবাদে উদ্বোধন করেন। সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রমিনেন্ট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: জাতীয় অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান, গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আইবিএ ঢাকার তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. এম. আলিমুল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার আলী আকবর চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এ কে এম আমিনুল হক, আল–বারাকা ব্যাংক এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট এ.এন. হামিদুল্লাহ, বিটিসি চেয়ারম্যান এ কে এম আহসান, ড. এ. কে. এম. আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর, ঔষধ প্রশাসনের পরিচালক ড. এ.বি.এম. সালেহউদ্দিন, বন গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের পরিচালক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী, জাহিদুজ্জামান ফারুক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। পরবর্তী অধিবেশনগুলো বাদামতলীস্থ চেম্বারে অনুষ্ঠিত হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভ্রাতা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন এবং তার সাথে সহ–উপস্থাপক হিসেবে আমি কয়েকটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি। সেমিনারে ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের একটি বড় দল আসে নিউজ কাভার করার জন্য। তাদের মধ্যে ছিল গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিয়াজ আহমেদ, জাকারিয়া কাজল, জাহিদুজ্জামান ফারুক, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এর মতো নামকরা বিখ্যাত সাংবাদিকরা। তখন টেলিভিশন শুরু হয়নি।
দুই দিনের সেমিনারে বক্তারা দেশে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির বিকাশের জন্য উপলব্ধ অভ্যন্তরীণ সংস্থানগুলিকে কীভাবে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে তাদের আলোচনাকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। অন্যান্য বিশিষ্ট বিষয়গুলির মধ্যে, শিক্ষার ক্ষেত্র, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ এবং পরিবার পরিকল্পনা, বিনিয়োগের সুযোগ ইত্যাদি আলোচনার জন্য এসেছিল। তারা আরও লক্ষ্য করেছেন যে দেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন সামগ্রিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা, আমদানিতে অযৌক্তিক ব্যাংকিং, বৈদেশিক সাহায্য এবং ঋণের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন, উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে জনগণকে দেশপ্রেম, উদ্দেশ্যের সততা, অংশগ্রহণের বোধ, সব ধরনের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার কঠোর আনুগত্যের অনুভূতিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি দেশের কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই স্বনির্ভর অর্থনীতির স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ষষ্ঠ অধিবেশনে অবিলম্বে গুঁড়া দুধ আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ গৃহীত হয়। পরিবর্তে, দুধ সরবরাহের জন্য গবাদি পশু এবং দুগ্ধ খামার গড়ে তোলার জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রামেরও সুপারিশ করা হয়েছিল। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এম.জি. আ. ক. এম. আহসান, বিটিসি চেয়ারম্যান প্রমুখ। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার মেয়াদকালে ‘রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে, ঢাকা কেন্দ্রিক সকল সংস্থা চট্টগ্রামে বিকেন্দ্রীকরণ, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঢাকা মাইগ্রেশনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।
৫.
সেমিনারের সংক্ষিপ্ত সুপারিশ :
ক. মানব সম্পদ হিসাবে কারিগরি এবং সাধারণ উভয় ক্ষেত্রেই মানব–শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার:
দেশে দক্ষ জনশক্তি অর্জনের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে বিদ্যমান অদক্ষ জনশক্তিকে দেশ ও বিদেশের বর্তমান প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানি করতে হবে এবং এই উদ্দেশ্য পূরণে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জোর দিতে হবে। প্রচলিত ঐতিহ্যের পরিবর্তে শিক্ষা ও উৎপাদন ভিত্তিক ক্যারিকুলাম চালু করতে হবে, যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত প্রশিক্ষিত জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করা যায় এবং উচ্চ কারিগরি শিক্ষা নির্বাচিত ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
খ. বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সমস্যা ও সম্ভাবনা:
দেশীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প (অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক) বিকাশের জন্য গবেষণা সেল স্থাপন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাকোলজিক্যাল বিভাগ খোলা এবং আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে ওষুধ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়। সরকারের উচিত এই খাতকে প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ–সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।
গ. মৎস্য সম্পদের সমস্যা এবং সম্ভাবনা এবং মিঠা ও সাগরের লোনাজল থেকে মাছ ধরা:
প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে এবং চিংড়ি এবং অন্যান্য মাছের জন্য আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় প্রতিটি উপজেলায় প্রতিটি প্রকার ও প্রজাতির উৎপাদনের উপযোগিতা বিবেচনা করে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত। চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে এবং চিংড়ি চাষের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে বাস্তবসম্মত জমি বরাদ্দ নীতি গ্রহণ করতে হবে।
ঘ. প্রাকৃতিক গ্যাস–সমস্যা এবং সম্ভাবনার উন্নয়ন:
যমুনা সেতু নির্মাণের সময় প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন ও বিতরণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং বড় আকারে এল.পি.জি. জ্বালানি সমস্যা সমাধান এবং বনায়ন রক্ষার জন্য প্লান্ট স্থাপন করা উচিত।
ঙ. অভ্যন্তরীণ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করার জন্য জাতীয়করণকৃত বাণিজ্যিক ব্যাংক সহ DFIS দ্বারা প্রদত্ত ঋণ এবং অগ্রিম ব্যবহারের পদ্ধতি:
আমদানি বাণিজ্যের স্বাধীনতার পরিবর্তে একটি স্বাধীন ও দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে, শিল্প, কৃষি ও দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক প্রকল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।
চ. লাইভ–স্টক সংরক্ষণ, দুগ্ধ ও পোল্ট্রি ফার্মের বৃদ্ধি:
দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটাতে উচ্চ ফলনশীল গবাদিপশু, হাঁস, মুরগি ইত্যাদির সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং সেসব রক্ষায় খাদ্য ও ওষুধ আমদানির ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণা এবং শিক্ষার জন্য এই ক্ষেত্রে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যান্ড গ্রেট কলেজ মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলিতে এই মডেলটি সফল প্রমাণিত হয়েছে।
ছ. বন সম্পদ উন্নয়নের বর্তমান প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা:
ইউনিয়ন পর্যায়ে বনায়ন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে এবং মাটির উপযোগিতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকায় সুলভ মূল্যে উদ্ভিদ বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যাপক বনায়নের জন্য বেসরকারি খাতকেও সরকারি পতিত ও খাস জমি ইজারা দিতে হবে। এটি বনায়ন এবং বেকারত্ব সমস্যা দূর করতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অবদান রাখবে।
৬.
অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার শিরোনামে যে সেমিনার হয়েছিল তার কনক্লুশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আমি আমরা তিনজন মিলে দাপ্তরিক কনক্লুশনস লিখে তৎকালীন গভরমেন্টকে পেশ করি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘ওসমান কেন করছো এগুলো? এটা আদৌ সরকার একসেপ্ট করবে না’।
এটি মূলত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি আন্দোলনে পরিণত করেছিলেন এবং সেই আন্দোলন বাস্তবায়নে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত শতাব্দীতে চট্টগ্রামে আরেক ভাষণে সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি নৌপথে পণ্য ও যাত্রী ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। যা এখন বাস্তবায়ন করা দরকার।
তথ্যসূত্র: ১. ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তৃতামালা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম। ২. এ্যানুয়াল রিপোর্ট চিটাগং চেম্বার ১৯৯০–১৯৯১। ৩. টমাস পিকেটি সর্বশেষ সংস্করণ। ৪. অমর্ত্য সেন দারিদ্র্যের অর্থনীতি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও কবি।
সাবেক সচিব, চট্টগ্রাম চেম্বার