বর্তমান পৃথিবীতে প্রযুক্তি, কৌশল, প্রশাসন, সামরিক প্রজ্ঞা সব কিছুর একক নিয়ন্ত্রণ করছে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। বিশ্বে দেড় কোটির মতন তাদের জনগোষ্ঠী রয়েছে। দেড় কোটি ইহুদি যেন সারা বিশ্বে একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে। আর তাদের মদদ দিচ্ছে বিশ্বমোড়ল খ্যাত আমেরিকা। জনসংখ্যার দিক থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বিরা এগিয়ে, তাদের সংখ্যা ২৩০ কোটি। পৃথিবীতে ২য় স্থানে রয়েছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা। তাদের জনসংখ্যা ২০০ কোটি। হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের সংখ্যা ১৩০ কোটি। পৃথিবীর নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ইসরায়েল নামক ইহুদি রাষ্ট্রটি। অন্যান্য রাষ্ট্রে স্বল্প সংখ্যক ইহুদি রয়েছে– যাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। ইহুদিরা তথা বনি ইসরায়েল জাতি অভিশপ্ত ও নাফরমান জাতি হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী সর্বজনবিদিত। তাদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও অপকর্ম বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সামনে দিনের আলোর মতন স্পষ্ট। তাদের ইতিহাস বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দিকে, ‘তোমরা তোমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, সে আগেই তোমাদের মুসলিম নাম রেখেছিল’– সূরা–আল হাজ্জ–৭৮। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী হযরত সারা (আঃ) এর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত ইসহাক (আঃ), ২য় স্ত্রী হযরত হাজেরা (আঃ) এর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। হযরত ইসমাইল (আঃ) এর বংশে দীর্ঘদিন কোন নবী আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করেননি। এ বংশে সর্বশেষ নবী সাইয়্যেদিনা মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আ’লামিন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দ্রষ্টা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম হয়েছিল। হযরত ইসহাক (আঃ) এর বংশে জন্ম হয়েছিল হযরত ইয়াকুব (আঃ)। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর অন্য নাম হল ইসরায়েল। তাই হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর বংশধররা বনি ইসরায়েল নামে পরিচিত। বনি ইসরায়েল হচ্ছে ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধরদের একটি শাখা। এরই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর আরেক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ইহুদি নামকরণ করা হয়েছিল। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর বার সন্তান ছিল। তার মধ্যে এক সন্তানের নাম হযরত ইউসুফ (আঃ)-যাকে তার অন্যান্য ভাইয়েরা ষড়যন্ত্র করে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। হযরত ইউসুফ (আঃ) এর এই পরিণতির জন্য তার ভাই ইয়াহুদা অনেকাংশে দায়ী বলে ইতিহাসবেত্তারা ধারণা করছেন। আল্লাহর কোরআনে ইহুদিদের অভিশপ্ত ও লাঞ্চিত জাতি হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। সুদখোর ও ধনলিপ্সু জাতি হিসেবে তাদের একটি সুন্দর পরিচয় রয়েছে। এই জাতি যুগ যুগ ধরে খোদাদ্রোহিতা, কুফরি এবং জঘন্য অপকর্মের কারণে গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণাভরে পরিচিত লাভ করেছে। বনি ইসরায়েল নামে খ্যাত এই ইহুদিজাতি যখন পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন থেকে মিশরে স্থানান্তরিত হল তখন মিশর শাসন করছিল হাকসুস জাতি। হাকসুস জাতির সাথে তাদের খুব ভালো সু–সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে যখন ফেরাউন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল তখন বনি ইসরায়েলের সাথে তাদের বিদ্রোহ শুরু হয়। তাদের পুত্র–সন্তানদের হত্যা করা হত এবং কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখা হত। এরই মধ্যে হযরত মুসা (আঃ) এর আবির্ভাব ঘটে। মুসা (আঃ) কুখ্যাত ফেরাউনের ঘরে বড় হতে থাকে। ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া (আঃ) শিশু মুসা (আঃ) কে আদর যত্নে লালন–পালন করতে থাকেন। যখন যুবক পর্যায়ে হযরত মুসা (আঃ) উপনীত হলেন, তখন মিশরের এক বাজারে বনি ইসরায়েলের এক ব্যক্তির উপর ফেরাউনের এক অনুসারীর আক্রমণ দেখে তিনি তা সহ্য করতে পারলেন না। একপর্যায়ে ফেরাউনের সেই অনুসারীকে হত্যাই করে ফেললো। এতে হযরত মুসা (আঃ) ভয় পেয়ে পার্শ্ববর্তী মাদইয়ান নামক দেশে চলে গেলেন। সেই দেশ শাসন করতেন আল্লাহর আরেক নবী শোয়াইব (আঃ)। হযরত মুসা (আঃ) এর আমানতদারিতা, সততা, শারীরিক সক্ষমতা ও নিষ্ঠার প্রতি অভিভূত হয়ে তার এক মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। এরপর ৪০ বছর বয়সে হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মিশরে ফিরে এলেন। কারণ তাকে শুধুমাত্র মিশরের জন্যই আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ও তার ভাই হযরত হারুন (আঃ) অহংকারী ও আল্লাহর সাথে ঔদ্ধত্যকারী ফেরাউনকে আল্লাহর তাওহীদবাদের দিকে দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন। আর এতেই বাধ সাধে ফেরাউন। আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত মুসা (আঃ)কে হিজরত করার আদেশ দিলেন। তিনি বনি ইসরায়েলদেরকে সাথে নিয়ে লোহিত সাগরের দিকে রওনা দিলেন। আল্লাহর কুদরতি শক্তিতে লোহিত সাগরে ১২টি রাস্তা হয়ে গেল। মুসা (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীরা সাগর পাড়ি দিলেন। ফেরাউন ও তার দলবল লোহিত সাগরে সলিল সমাধি হলেন। হযরত মুসা (আঃ) বনি ইসরায়েল জাতিকে সিনাই উপত্যকায় রেখে পার্শ্ববর্তী তুর পাহাড়ে গেলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব আনার জন্যে। ৪০ দিন পর ফিরে এসে দেখেন তার অনুসারীরা গরুর বাছুরের পূজা করছেন, এতে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তাদেরকে বললেন, ‘তোমাদেরকে আল্লাহতায়ালা ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করলেন কোন যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়াই। তোমাদের উচিৎ ছিল আল্লাহর শোকর গুজার করা। কিন্তু তোমরা তা না করে আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করছো’? তাদের এই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ পুনরায় আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দিলেন। আবার তারা বায়না ধরল আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার জন্য কিন্তু আল্লাহকে তো মানুষের চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহকে দেখতে গিয়ে আল্লাহর নূরের আলোয় তারা ঝলসে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হল। আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য আসমান থেকে মান্না আর সালওয়া নামক বেহেস্তি খানার ব্যবস্থা করে দিলেন।
অনেকদিন তা খাওয়ার পর তারা পরবর্তীতে তা খেতে অস্বীকৃতি জানাল। হযরত মুসা (আঃ) কে এই বনি ইসরায়েল তথা আজকের এই ইহুদি জাতি এভাবে পদে পদে চরম অপমান ও অপদস্ত করতে থাকে। তাদেরকে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে বসবাসরত আমালিকা গোত্রের সাথে যুদ্ধের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসলেও তা করতে অস্বীকার করে এবং তারা স্পর্ধার সাথে বলতে থাকে, ‘তুমি ও তোমার রব গিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসে আছি’। এই অপরাধের কারণে আল্লাহতায়ালা সিনাই উপত্যকায় তাদেরকে ৪০ বছর অবরুদ্ধ করে রাখলেন। হযরত দাউদ (আঃ) প্রতি শনিবার আল্লাহর কিতাব যাবুর পাঠ করতেন। ঐ সময় সমুদ্রের মাছও কিনারে এসে তাঁর তেলোয়াত শুনত কিন্তু ইহুদিরা ঐ সময় মাছগুলো ধরে নিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐ দিন মাছ ধরা নিষেধ হলেও তারা মাছ ঘেরাও করে রেখে রবিবার তা ধরতো। আল্লাহ এর শাস্তিস্বরূপ তাদের এক দলকে বানরে পরিণত করেন। তিন দিনের মাথায় এই দলের সব বানর মারা যায়। ইহুদি জাতি হযরত দাউদ (আঃ) এর পর তার পুত্র হযরত সোলাইমান (আঃ) যখন ফিলিস্তিনের শাসনভার গ্রহণ করেন, তখন তাঁর সাথেও বিদ্রোহ শুরু করে। তাঁর ওফাতের পর তাদের ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্ম বেড়ে যায়। অন্য নবীরা তাদের কার্যকলাপে শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করলেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সাথে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের উপরে মিশরের জনৈক সম্রাট তাদের উপর ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়। এভাবেই ইহুদি জাতিরা আল্লাহর অভিশপ্ত ও নাফরমান জাতি হিসেবে আজও শান্তিকামী মানুষের উপর বিশৃখলা, সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে–তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ইরান–ইসরায়েল সংঘাত।
লেখক: সভাপতি–রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল।