ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করে কেন্দ্র থেকে দেয়া চিঠিতে যেসব অভিযোগ করা হয় তা ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। যে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে চিঠি দেয়া হয় তা ‘পক্ষপাতদুষ্ট জনভিত্তিহীন ও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের মদদপুষ্ট’ বলেও দাবি করেন তিনি। তাই সত্য উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেয়া এক চিঠিতে এসব দাবি করেন গিয়াস কাদের। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনার বিচক্ষণতা ও নেতৃত্বে দল একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে এবং একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে আমার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা হবে’। চিঠি দেয়ার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন গিয়াস কাদের।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। এতে বলা হয়, ‘আপনি কয়েক মাস যাবত নিজ এলাকায় দলের অভ্যন্তরে হানাহানি, সংঘাতে মদদ দেয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বারবার দল থেকে সতর্ক করার পরেও আপনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানি দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সুতরাং দলের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে’।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান : দলের চেয়ারপার্সনকে দেয়া চিঠিতে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, অভিযোগের বিষয়ে নতুনভাবে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত ঘটনা এবং অভিযোগের উৎস যাচাই করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কারণ যে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাকে চিঠি দেয়া হয়েছে তা সর্বৈব পক্ষপাতদুষ্ট, জনভিত্তিহীন ও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের মদদপুষ্ট। নতুন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে আমি নিজেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, আমি দলের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য এবং নিষ্ঠা বজায় রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছি এবং আমার রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ডে দলের স্বার্থকেই সমুন্নত রেখেছি। এটাই আমার পরিবার ও আমার নিজের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা।
গিয়াস কাদের চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির পক্ষ থেকে জারিকৃত পত্রের মাধ্যমে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত অবহিত করা হয়েছে। উক্ত পত্রে অত্যন্ত ভ্রান্তভাবে অভিযোগ করা হয়েছে, আমি আমার এলাকায় দলের অভ্যন্তরে হানাহানি ও সংঘাতে মদদ দিয়ে আসছি। আরো অভিযোগ যে আমাকে বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও আমি নাকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছি।
তিনি বলেন, এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়া তো দূরের কথা, উল্টো আমার এলাকায় দলীয় শৃঙ্খলা ও দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমি নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমার নিজ দলীয় কতিপয় নেতা–কর্মী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে নিজ স্বার্থে কিছু আওয়ামী দুষ্কৃতকারীদের নিয়ে এলাকায় প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, দখল ও নানাবিধ শান্তি বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি দলের কেন্দ্রীয় ফোরামের কাছে ইতিপূর্বে লিখিত আবেদন করেছি ও মৌখিকভাবেও বার বার অনুরোধ জানিয়েছি।
গিয়াস কাদের বলেন, এলাকায় সার্বিক শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারীদের প্রতিহত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে গত ২২ এপ্রিল একটি চিঠিও দিয়েছি। এলাকার শান্তিরক্ষায় আমার এতসব উদ্যোগী ভূমিকার পরও খোদ আমারই বিরুদ্ধে দলের অভিযোগ সম্বলিত পত্রটি আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও অসম্মানজনক, যা আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
গিয়াস কাদেরের বিবৃতি : গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গিয়াস কাদের চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করেন। এতে তার পদ সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে গিয়াস কাদের বলেন, আমি বিএনপির একজন আদর্শিক রাজনীতিক। শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি সর্বদা দলের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি এবং জনগণের পাশে থেকেছি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও একটি বিশেষ মহলের চক্রান্তমূলক প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, আমি শুধু নিজে সন্ত্রাস ও অরাজকতার বিরুদ্ধে ছিলাম না, বরং দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় আওয়ামী প্রভাবিত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছি। বরং আমি একাধিকবার দলের কেন্দ্রীয় ফোরামে লিখিতভাবে এবং সরাসরি কিছু নেতা–কর্মীর অপতৎপরতার বিষয়ে সতর্ক করেছি। তা সত্ত্বেও উল্টো আমাকে অপরাধী বানিয়ে পদ স্থগিত করা দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থী ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
গিয়াস কাদের বলেন, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে দেয়া চিঠিতে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ সেই উদ্যোগকেই ভুল ব্যাখ্যা করে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গিয়াস কাদের বলেন, দলের অভ্যন্তরে একটি ষড়যন্ত্রমূলক গোষ্ঠি বিএনপির আদর্শ ও নেতৃত্বকে বিতর্কিত করতে সচেষ্ট। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চেয়ারপার্সনের বিচক্ষণ নেতৃত্বে একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত হবে এবং আমার রাজনৈতিক সম্মান পুনঃস্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাউজান–রাঙামাটি সড়কের সর্তারঘাট এলাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দাকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হন গোলাম আকবর খোন্দকার। এ ঘটনার জের ধরে রাতে উত্তর জেলা বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত করা হয় এবং গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদ স্থগিত করা হয়।