নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক–সবজি, ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখতে ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া টেক্সটাইলের কাপড়ের রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, আইসক্রিম, মিষ্টি, পাউরুটি, বিস্কুট, দই, ললিপপ, চকলেট এবং কেক। শিশু খাদ্য গুঁড়ো দুধেও পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। অন্যদিকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাটাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা রুটিন অভিযান চালালেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। সবসময়ই ঘুরে ফিরে সক্রিয় থাকছে খাদ্যে ভেজালকারী চক্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল এসব খাবার খেয়ে মানুষ কিডনি বিকল, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া দেশে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কোনো নজির নাই। ফলে তারা শুধু জরিমানার অংক গুণেই ফের একই কাজ করতে থাকে। মূলত এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব এর জন্য দায়ী। লিভার ও কিডনি বিকলের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত
হওয়ার পেছনে ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত খাবারই দায়ী। ভেজালের সঙ্গে জড়িত লোকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যকে ভেজালমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকার যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে থাকে। এছাড়া চীনে মৃত্যুদণ্ড, পাকিস্তানে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমাদের দেশেও খাদ্যে ভেজাল মেশালে আইন আছে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ নাই।
জানা গেছে, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ–১৯৫৯ (সংশোধিত ২০০৫) এ খাদ্য ভেজাল পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন–২০০৯ এ সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নতুন প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইন–২০১৩ তে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসবের খুব একটা প্রয়োগ হয় না বললেই চলে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ–পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত আমরা তাদের কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। প্রাথমিকভাবে অনেককে সতর্ক করেছি। কিন্তু তারপরেও যারা ভেজাল করে যাচ্ছে, তাদের জরিমানা করছি। জরিমানার ফলে যেটি হচ্ছে, তারা আর ভেজাল করছে না। তবে সমস্যা হচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে শুরু করছে তারা হয়তো ভেজাল খাবার উৎপাদন করছে। আমরা ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে নজরদারি অব্যাহত রেখেছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদী বলেন, ভেজাল বিরোধী অভিযানে দেখা যায়, প্রশাসন প্রায় সময় জরিমানা দিয়েই দায় সারে। কিন্তু আমরা বারবার বলে আসছি, জরিমানার পরিবর্তে যদি অপরাধীদের জেল দেয়া যায়, তাহলে অপরাধের প্রবণতা কমতো। আবার দেখা যায়, প্রশাসন জরিমানা দেয়ার পরে তিন মাস আর ওই প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও যায় না। ফলে ওই অপরাধী একই ধরনের কাজ আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।