অভিনন্দন জয়িতা

সুবীর পালিত | মঙ্গলবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে যেখানে পদে পদে বাধা, রক্ষণশীল সমাজ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, সেখানে একজন মেয়ে নিজেকে, সন্তানকে তথা পরিবারকে রক্ষা করার জন্য দৃপ্তভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেছে। কল্পনাকে হার মানায়। সীতাকুণ্ডের এই মেয়েটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ৩৮তম ব্যাচ। এরপর ভালোবেসে বিয়ে করেন কুমিল্লার লাকসামের ছেলে যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ৩৪তম ব্যাচ। সুখেশান্তিতে দিন কাটছিলো তাদের। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অমোঘ বিধানে স্বামী ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে রেখে মারা যান। তখন দ্বিতীয়বার তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর অকালমৃত্যুতে তিনি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যান। স্বামীর মৃত্যুর ৪০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় মেয়ের জন্ম হয় সিজারের মাধ্যমে। এরপর তিনি মা বাবার কাছে চলে আসেন। যদিও বাবা মা, ভাই, বোন সবাই সহযোগিতা করেছেন তবুও কেন জানি একটা অস্বস্তি কাজ করতো। নিজেকে স্বাভাবিক করে ২০১৯ সালে একটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে যোগ দিয়ে তিন বছর শিক্ষকতা করেন। কিন্তু সর্বগ্রাসী করোনার থাবায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তখনই মাথায় জাগে কিছু একটা করে বাঁচার। ঠিকমতো অনলাইনে হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক, বাটিকে ২০২০ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। টানা ছয়মাস কাজ শিখে অনলাইনে পোস্ট করেন। প্রথম পোস্টেই বাজিমাত করেন। অর্ডার কনফার্ম হয়। এরপর অন ও অফ লাইনে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। সিমস প্রজেক্ট প্রত্যাশী এল এস পি হিসেবে তিন বছর উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে পরপর দুবছর সিমস প্রজেক্ট থেকে বেস্ট পারফরম্যান্স এওয়ার্ড পান। এরপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ট্রেইনার হিসেবে যুক্ত হন ২০২৩ সালে। প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ২০২৪ সালে সফল আত্মকর্মী হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সম্মাননা অর্জন করেন। বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং বেস্ট সেলার হন। চলতি ২০২৫ সালে কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়ার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সকল ধরনের সিজনাল আচার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই উদ্যোগও সফল হয়েছে। তিনি বিসিকসহ আরও অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বড় মেয়ে নবম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশোনা করে। তিনি এখন পর্যন্ত অন ও অফলাইনে প্রায় এক হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং যাদের আর্থিক অসঙ্গতি আছে তাদেরকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও মেধার প্রমাণ দিয়ে তিলতিল শ্রমে এখন গড়ে তুলেছেন চারুলতা বুবলীস ক্রিয়েশন ও বুবলীর রসুইঘর। তিনি ফারহানা খানম বুবলী। ইচ্ছে থাকলে একজন মেয়ে কতদূর যেতে পারে তা ফারহানা খানম বুবলী দেখিয়ে দিয়েছে। বুক গর্বে ভরে ওঠে। নারী উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে স্বপ্নজয়ী স্টার এওয়ার্ড, সম্মিলিত উদ্যোক্তা ফোরাম ও ঝিলটেক ইকমার্স জোনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুরস্কার, সম্মিলিত উদ্যোক্তা ফোরাম এর বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলার রন্ধন রেসিপি৭ এর পুরস্কারসহ অনেকগুলো পুরস্কার তিনি লাভ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবাসীদের জীবন : নীরব যুদ্ধের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধসমাজ সংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া