কক্সবাজার–মহেশখালী নৌ রুটে দৈনিক যাতায়াত করেন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী। বর্তমান পর্যটন মৌসুমে বাড়তি যাতায়াত করছেন দুই হাজারের বেশি পর্যটক। কিন্তু এমন জনগুরুত্বপূর্ণ নৌ–রুটটি এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রী ও পর্যটকদের।
কক্সবাজার ও মহেশখালী দুই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ হলেও কারো নিয়ন্ত্রণে এই নৌ–রুট। ফলে কক্সবাজার ৬ নং ঘাট ও গোরকঘাটা জেটিঘাটে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থাপনা। এতে রিজার্ভের নামে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সাধারণ যাত্রীদের নানা হয়রানি, বিশৃঙ্খলা, চালক কর্তৃক যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার; এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটছে। পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে মহেশখালীতে বেড়াতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন পর্যটকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, গণঅভ্যুত্থানের আগে এই নৌ–রুটে স্পিড বোটে ১১০ টাকা এবং কাঠের বোটের জনপ্রতি ভাড়া ছিলো ৪০ টাকা। স্পিডবোটের ১১০ টাকার মধ্যে ১০ টাকা এবং কাঠের বোটের ৪০ টাকার মধ্যে পাঁচ টাকা টাকা খাস কালেকশন করত জেলা প্রশাসন। ওই টাকা পরে দুই পৌরসভার উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হতো। গণঅভ্যুত্থানের পর ভাড়া কমানো এবং নানাভাবে যাত্রী হয়রানির দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ভাড়া কমিয়ে স্পিডবোট ৯০ টাকা এবং কাঠেরবোটের ভাড়া ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে জেলা প্রশাসনের খাস কালেকশন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঘাট রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োগকৃত জেলা প্রশাসনের কর্মীদের উঠিয়ে নেয়া হয়। ফলে ভাড়া কমলেও অভিভাবকহীন হয়ে অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে যাতায়াত ব্যবস্থা।
তবে স্পিডবোট মালিক সমিতি জানায়, জেলা প্রশাসন তাদের লোকজন উঠিয়ে নেয়ায় বোট মালিকদের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের লোকজন নিয়োগ করা হয়। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, আগের নিয়োগকৃত জেলা প্রশাসনের কর্মীরা যেভাবে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, বোটমালিকদের নিয়োগকৃত কর্মীরা তা করেন না। বিশৃঙ্খলা হলেও তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন না। বোট মালিকদের নিয়োগকৃত কর্মী হওয়ায় তারা চালকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। অবিযোগ রয়েছে–বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভয়ে নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠেঅর হতে পারেন না তারা। নিয়োজিত এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যাত্রী হয়রানিসহ চালকদের অব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আরোপ করলে চালকরা হুমকি দেয়; এমনকি মারধর করতে চায়।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, কঙবাজার প্রান্তের ৬ নং ও মহেশখালী প্রান্তে গোরকঘাটা–দুই ঘাটে কোনো শৃঙ্খলার রেশমাত্র নেই। যাত্রীরা কে কার আগে বোটে উঠবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এই ফাঁকে অসাধু চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে রিজার্ভের নামে ইচ্ছেমতো যাত্রী পারাপার করছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটকরা। অন্যদিকে বোট না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। তবে অসহায়ের মতো নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে দায়িত্বরত কর্মীদের।
এ সময় কথা হলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রিজার্ভ স্পিডবোটে পারাপারে কথা জানিয়েছেন পর্যটকদের কয়েকজন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে স্থানীয় যাত্রীদের বোটে তোলে না স্পিড চালকরা।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আবদুল মজিদ বলেন, ঘাটের চাপাচাপি আর হুড়োহুড়ি খুব বাজে। এতে পানিতে পড়ে যাওয়ার চরম ঝুঁকি ছিলো। এতো দুর্ভোগের কারণে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
স্থানীয় যাত্রী মহেশখালীর আবদুর রশিদ বলেন, আমাকে মামলা ও নানা দরকারি কাজে নিয়মিত কঙবাজারে শহরে যেতে হয়। কিন্তু ঘাটের অব্যবস্থাপনায় একদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আতাউল্লাহ বোখারী বলেন, ঘাট নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক দুইদিকে পাঁচজন লোক নিয়োজিত রয়েছে। পর্যটকের চাপে বর্তমানে একটু সমস্যা হচ্ছে। পরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কঙবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ–পরিচালক ও কঙবাজার পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ রফিকুল হক বলেন, ঘাটের হয়রানি বিষয়ে ইতিমধ্যে সমন্বয়কদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হয়রানি রোধে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন হবে।