অবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকিতে বেড়িবাঁধ কাম সড়ক, শত শত বসতবাড়ি

চকরিয়ায় হারবাং ছড়া

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নেমেছে একটি বালুদস্যুচক্র। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এই বালুর কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এতে ভুক্তভোগী লোকজন ও বালুদস্যুদের মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে পার্বত্য অববাহিকার হারবাং ছড়া খালটির উপর উত্তর হারবাংয়ের হারবাং লালব্রিজ এলাকায় নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের হারবাং ছড়া সেচ প্রকল্পটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরুর দিকে (গত মে মাসে) পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে সেচপ্রকল্পটির দক্ষিণাংশের মাটি ধসে পড়ে। এর পর থেকে প্রকল্পটির দক্ষিণাংশ দিয়ে পানি চলাচল করতে থাকায় চরম হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ কাম এলজিইডির সড়ক, কয়েকশত বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকাসহ হারবাং ছড়া সেচপ্রকল্পের পশ্চিমাংশের ভাটি থেকে শ্যালোমেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে একটি বালুদস্যু সিন্ডিকেট। এতে ছড়াখালটির দুই তীরসহ আশপাশের বসতবাড়ি ছড়াখালে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশাল বিশাল অংশ ইতোমধ্যে ছড়াখালে ধসে পড়েছে। এই অবস্থায় ভুক্তভোগী লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বালু মহাল হিসেবে প্রতিবছর হারবাং ছড়া সেচ প্রকল্পের পশ্চিমাংশ তথা তিন নম্বর বালু পয়েন্ট হিসেবে ইজারা দিয়ে আসছে। ইজারার অজুহাতে ছড়ার অসংখ্য স্থানে অবৈধভাবে শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে মানুষের ঘরবাড়ি, শ্মশানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ভুক্তভোগী লোকজনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করার পর চলতি বছর জেলা প্রশাসন ছড়া খালের তিন নম্বর পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়নি।

স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজনের ভাষ্যমতে, সাম্প্রতিক দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ছড়া খালটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। এ নিয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বাধা দিলে বালুদস্যুচক্রটি স্থানীয় বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে চরম উত্তেজনাও বিরাজ করছে।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজের এ নিয়ে কারও নাম ধরে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ছড়া খালটির তিন নম্বর পয়েন্ট থেকে একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন তাকে জানিয়েছেন বলে জানান।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ছড়া খালটির দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ কাম সড়ক, কয়েকশত বসতবাড়ি হুমকির মুখে নিপতিত হওয়ার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’

উত্তর হারবাংয়ের ভুক্তভোগী বড়ুয়া পাড়ার বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যারা এই অবৈধভাবে বালুর কারবারে জড়িত রয়েছে তারা একটি রাজনীতি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এলাকায় মহড়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শুরু করেছে। বালু উত্তোলনের কারণে সড়ক, মানুষের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলারও সাহস নেই। বালু তুলতে বাধা দেওয়ায় ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহতও করেছে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন বলেন, ‘হারবাং ছড়ার তিন নম্বর পয়েন্ট থেকে কাউকে বালু তোলার ইজারা প্রদান করেনি জেলা প্রশাসন থেকে। এর পরও গায়ের জোরে অবৈধভাবে বালু তোলা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেলা নয়, এখন হবে শুধু খেলা
পরবর্তী নিবন্ধপারকি সৈকতে শত শত ঝাউগাছ বিলীন