অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ঝুঁকির মুখে ব্রিজ

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | সোমবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ার পুটিবিলা ও চুনতি ইউনিয়নের সংযোগস্থল ডলু খালের উপর নির্মিত বেইলি (স্ট্রিল) ব্রিজটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজের চারপাশের মাটি দেবে যাচ্ছে এবং ব্রিজটির অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার পুটিবিলা ও চুনতি ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে ডলু খালের উপর প্রায় ২৫ বছর আগে নির্মিত হয় বেইলি ব্রিজ। এটি লোহাগাড়া, বান্দরবানের আলীকদম ও লামা উপজেলার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ব্রিজ থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে বালু উত্তোলন। স্থানীয়রা জানান, দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী বেইলি ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্রিজ ভেঙে পড়লে হাজার হাজার মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হবে। বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজটি এখন হুমকির মুখে। বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়াতে প্রভাব খাটিয়েই তারা নিয়মিত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যার কারণে খালের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ। অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে কৃষিজমি রক্ষা করা যাবে না। জীববৈচিত্র্য নষ্ট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত ব্রিজের আশপাশ এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। অন্যথায় ব্রিজটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার আশঙ্কা রয়েছে। যা হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির কারণ হবে। ব্রিজটি সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের নিচে ডলু খালের পাড়ে এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ শত শত যানবাহন চলাচল করে। বালু উত্তোলনের ফলে খালের গভীরতা বেড়ে ব্রিজের বেইজের পিলারগুলো দেখা যাচ্ছে। গাড়ি চলাচল করলে দুলতে থাকে ব্রিজটি। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা বলছেন স্থানীয়রা। পুটিবিলার বাসিন্দা নুর হোছাইন জানান, ব্রিজের উজানে ও ভাটায় ৪৫ স্থানে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজটি। ব্রিজের পিলারের কাছে সৃষ্টি হয়েছে ৩০৪০ ফুট গর্ত। ব্রিজটির নিচে ও পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নিচের পিলার ভেসে উঠেছে। এতে ব্রিজটি হুমকির মধ্যে রয়েছে।

চুনতির বাসিন্দা রেজাউল বাহার রাজা জানান, অনেক বছর আগে আশপাশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজের ভিত্তি নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানেও রাতে ব্রিজের আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। দিনের আলো ফোটার আগেই বালু উত্তোলনের মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়। যার ফলে প্রশাসনের কাছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বালুখেকোরা। প্রায় দেড় বছর আগে ডলু খালের ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে পরিমাপ করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। চুনতি ও পুটিবিলা ইউনিয়নের সংযোগস্থলে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকার সর্বমহলের।

লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইফরাদ বিন মুনীর জানান, পুটিবিলা ও চুনতি ইউনিয়নের সেতুবন্ধন সড়ক ডলু খালের উপর ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালুখেকোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ব্রিজের উভয়পাশে নির্দিষ্ট সীমানায় কোনো ধরনের বালু উত্তোলন করা যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে মহোৎসবের
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যাপক উপস্থিতি, নতুন শঙ্কা