অবৈধভাবে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে চক্র

আরেক চক্র সিমগুলো কালোবাজারে ছাড়ে গ্রাহকের অজান্তে এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট কাজে লাগিয়ে এই কাজ

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ১০ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

গ্রাহকের অজান্তে তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করছে একটি চক্র। আরেকটি চক্র অবৈধভাবে নিবন্ধন করা সিমগুলো কালোবাজারে ছাড়ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহককে। এসব নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন ঘটনায় উদ্ধারও হচ্ছে অবৈধভাবে নিবন্ধিত সিম। থামছে না দৌরাত্ম্য। অথচ চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানিগুলোর সিমের অপব্যবহার রোধে সরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল। এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযানে দেখা গেছে, আসামিরা যে সিমগুলো ব্যবহার করে সেগুলো তাদের নাম, এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধিত নয়। র‌্যাবের কাছে একটি প্রযুক্তি রয়েছে অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস), যা দিয়ে অপরাধীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ বা নাম সার্চ করে, এমনকি ডিভাইসের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেও জানা যাবে তার আসল পরিচয়সহ অন্য তথ্য। সুতরাং অপরাধীরা তাদের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সিম ব্যবহার না করলেও পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, অন্যের সিম ব্যবহার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ অপরাধীরা যখন তাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করবে না তখন তারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হবেই। যারা এ ধরনের সিম কেনাবেচা ও এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির অসাধু অপারেটর, এজেন্ট, দোকানদার হয়ে একটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিবন্ধিত সিমগুলো যাচ্ছে কালোবাজারে, যা ক্রয় করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে অপরাধীরা। এসব সিম ব্যবহার করার কারণে আবার অনেক সময় অপরাধীদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সম্প্রতি বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া অবৈধ সিম ও এগুলোর সাথে আটক চক্রগুলোর সদস্যদের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন তথ্য পেয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম থেকে সিম নিয়ে এ অপরাধের সূত্রপাত ঘটে। নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহককে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন করে সিম কিনতে হয়। ওই সময় এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে গ্রাহককে সিম নিবন্ধন করতে হয়। সেই অনুযায়ী গ্রাহক তার নামে নিবন্ধনকৃত সিমটি কিনে চলে যান। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায়, কিছু কিছু কোম্পানির অসাধু অপারেটররা গ্রাহকের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের তথ্য মুছে না ফেলে সেগুলো সংরক্ষণে রাখে। পরে সেগুলো আরেকটি চক্রের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। গ্রাহকদের অজান্তেই ওইসব তথ্য ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের আরো কয়েকটি সিম রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ওইসব সিম কালোবাজারে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।

ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড় ও দোকানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির অসাধু এজেন্ট থেকেই এ কারসাজি হয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৬টি সিম নিবন্ধন করতে পারেন। বেশিরভাগ গ্রাহক সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪টি সিম ব্যবহার করেন। বাকিগুলো রয়ে যায়। সেই সুযোগটা কাজে লাগায় চক্রটি। এছাড়া এনআইডির নম্বর দিয়ে নতুন আরেকটি এনআইডি বানানো যায়। এজন্য নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন শাহ আমানত মার্কেট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারকেন্দ্রিক অনেক চক্র সক্রিয় রয়েছে।

সিম নিবন্ধন যাচাই করার উপায় : গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক এবং টেলিটক সিমের মাধ্যমে যে কারও নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়া সিমের সংখ্যা জানা যাবে। সেজন্য *১৬০০১# ডায়াল করতে হবে। এই নম্বরে ডায়াল করার পর ফিরতি মেসেজে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের শেষের চারটি সংখ্যা দিতে বলবে। এ পর্যায়ে এনআইডি কার্ডের শেষের চারটি সংখ্যা সাবমিট করে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি মেসেজে এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিমগুলোর নম্বর পাওয়া যাবে। প্রিপেইড বা পোস্টপেইড যে সিমই হোক না কেন সব নম্বর দেখাবে। তবে নম্বরগুলো সম্পূর্ণ দেবে না। প্রতিটি নম্বরের শুরুর তিন ডিজিট এবং শেষের তিন ডিজিট দেখাবে। ঠিক অনেকটা এ রকম +৮৮০১৫*****০০০। এই সেবার জন্য কোনো চার্জ কাটা হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্মিলিত পরিষদের পূর্ণ প্যানেলে জয়
পরবর্তী নিবন্ধআতশবাজির আগুনে পুড়ল বিয়েবাড়ি