অবিশ্বাস্য ইনিংসেও নায়ক হতে পারলেন না জাকের

৩ রানে হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ৫ মার্চ, ২০২৪ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টিটোয়েন্টিতে জয়ের সুযোগ তৈরি করেও মাত্র ৩ রানে ম্যাচ হারলো টাইগাররা। শ্রীলংকার করা ৩ উইকেটে ২০৬ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ২০৩ রান করে বাংলাদেশ। জাকের আলি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। জাকের ৩৪ বলে ৬৮ এবং মাহমুদউল্লাহ ৩১ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন।

সিলেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি আদায় করে নেন শ্রীলংকার ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দো। শরিফুলের পরের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে নিয়ে সাজঘরে ফিরেন ৪ রান করা আবিস্কা। দ্বিতীয় উইকেটে ২৫ বলে ৩৩ রান যোগ করেন আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিংয়ে এসে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রান করা কামিন্দুকে শিকার করেন পেসার তাসকিন আহমেদ। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪৫ রান আসার পর রানের গতি বাড়ান কুশল ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। পরের ৮ ওভারে ৮৬ রান তুলে দলের রান তিন অংকে নেন দুজন। এরমধ্যে স্পিনার রিসাদ হোসেনের করা ১২তম ওভারে ১৮, শরিফুলের করা ১৩তম ওভারে ২১ রান নেন কুশল ও সামারাবিক্রমা। ১২তম ওভারে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৮ বল খেলা কুশল। পরের ওভারে সৌম্য সরকারের বলে লিটনের হাতে জীবন পান কুশল। ৫৬ রানে জীবন পাবার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। ১৫তম ওভারে স্পিনার রিসাদের বলে লং অফ দিয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দারুন ক্যাচে আউট হন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৯ রান করা কুশল। সামারাবিক্রমাকুশল তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৯৬ রান যোগ করেন। দলীয় ১৩৩ রানে কুশল ফেরার পর ক্রিজে এসে বাংলাদেশের বোলারদের উপর ছক্কার বন্যা বইয়ে দেন শ্রীলংকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা। শেষ ৪ ওভারে আসালঙ্কার ৬ ছক্কায় ৬৪ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় লংকানরা। এই নিয়ে তৃতীয়বার বাংলাদেশের বিপক্ষে টিটোয়েন্টিতে ২’শর বেশি রান করলো শ্রীলংকা। ৬টি ছক্কায় ২১ বলে ৪৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন আসালঙ্কা। ৪৩ বলে টিটোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করা সামারাবিক্রমা শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রান যোগ করেন আসালঙ্কা ও সামারাবিক্রমা। বাংলাদেশের শরিফুলতাসকিন ও রিসাদ ১টি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজুর রহমানের করা শেষ ওভারে ২৪ রান পায় শ্রীলংকা।

জয়ের জন্য ২০৭ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম ওভার খেলতেই দলীয় ৩০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। রানের খাতা খোলার আগে ইনিংসের তৃতীয় বলে লিটনকে এবং পঞ্চম ওভারে তাওহিদ হৃদয়কে ৮ রানে বিদায় করেন মিডিয়াম পেসার ম্যাথুজ। চতুর্থ ওভারে সৌম্যকে ১২ রানে বিদায় করেন পেসার বিনুরা ফার্নান্দো। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে চতুর্থ উইকেটে ২৮ বলে ৩৮ রান যোগ করেন অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে ১২ বলে ২৫ রান তোলেন মাহমুদউল্লাহ। নবম ওভারে শান্তকে শিকার করে শ্রীলংকাকে ব্রেকথ্রু এনে দেন পেসার মাথিশা পাথিরানা। ৩ চারে ২২ বলে ২০ রান করে আউট হন শান্ত। পঞ্চম উইকেটে জাকের আলিকে নিয়ে রানের গতি ধরে রাখেন ২৭ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া মাহমুদউল্লাহ। পাথিরানার করা ১১তম ওভারে ২টি ছক্কায় ২০ রান পায় বাংলাদেশ। ১২তম ওভারে দলের রান ১শ পার হবার পর ২৭ বলে টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই সংস্করণে খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ। হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে শেষ পর্যন্ত ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩১ বলে ৫৪ রান করা মাহমুদউল্লাহ শিকার হন স্পিনার মহেশ থিকশানার। জাকেরমাহমুদউল্লাহ জুটিতে ২৯ বলে ৪৭ রান করেন। দলীয় ১১৫ রানে মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়াও হন জাকের। পরপর ৪ ওভারে ৫টি ছক্কা মারেন তিনি। নিজের ইনিংসে প্রথম চার মেরে ২৫ বলে টিটোয়েন্টিতে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন জাকের। ১৮তম ওভারে ২টি চার মেরে ১৬ রান করে আউট হন মাহেদি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জাকেরমাহেদি ২৭ বলে ৬৫ রানের জুটিতে শেষ ২ ওভারে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে ৩টি চারে ১৫ রান তোলেন জাকের। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রানের সমীকরন পায় টাইগাররা। শেষ ওভারে শানাকার প্রথম বলে রিসাদ ও তৃতীয় বলে আউট হন জাকের। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৩৪ বলে ২শ স্ট্রাইক রেটে ৬৮ রান করেন জাকের। চতুর্থ বলে শরিফুল বাউন্ডারি মারলে শেষ ২ বলে ৬ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ২ বলে ২ রানের বেশি পায়নি টাইগাররা। ৮ উইকেটে ২০৩ রান করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ম্যাথুজবিনুরা ও শানাকা ২টি করে উইকেট নেন। শ্রীলংকান অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা ম্যাচ সেরা হন। আগামী ৬ মার্চ একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় টিটোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে বহুতল ভবনে সার্ভে শুরু
পরবর্তী নিবন্ধরুমায় জিপ উল্টে নারীর মৃত্যু, আহত ৪