দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে পরিচিত হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য প্রজনন। এছাড়া বালু উত্তোলনের কারণে এ এলাকার সড়কগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষমতা দেখিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই কর্মকাণ্ডের ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই কাজ চলছে। তারা দ্রুত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। প্রতিনিয়ত হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে বালু উত্তোলনের ফলে হালদার বড় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কুলালপাড়া এলাকায় হালদা নদীর ৭টি পয়েন্টে কয়েকটি সিন্ডিকেট রাতদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এছাড়া উপজেলার অন্তত ১৫–২০টি পয়েন্টে হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বেশ কিছু সিন্ডিকেট। এর মধ্যে নারায়ণহাট ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া, ভাঙ্গাপুল, হাঁপানিয়া এবং পূর্ব সুয়াবিল নোয়াপাড়ায় আরো কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। অবৈধভাবে বালূ উত্তোলনের কারণে নদীর তীর ভাঙনসহ এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জামাল মেম্বার বলেন, এ এলাকায় দীর্ঘদিন বালু উত্তোলনের ফলে নদী এবং রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এসব অবৈধ বালু মহাল বন্ধের দাবি জানাই।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করার পরও এসব থামানো যাচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ এবং থানা পুলিশের সহযোগিতা। কিন্তু থানা পুলিশ এ কাজে তেমন এগিয়ে আসে না। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশাল এ ফটিকছড়িতে শুধু উপজেলা প্রশাসন দিয়ে এসব দমানো সম্ভব না। যেহেতু বালু উত্তোলন একটি আমলযোগ্য অপরাধ, যদি আমাদের পাশাপাশি থানা পুলিশ এ কাজে এগিয়ে আসতো তাহলে অনেকটা রোধ হতো। এছাড়াও আমরা অভিযান চালাতে ঘটনাস্থলে গেলে যারা বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত তাদের পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় শ্রমিকদের। স্থানীয়রা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমাদের কাজটা আরো সহজ হতো।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, হালদা নদী বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে মাছের প্রজনন ও ত্বরণ বিঘ্নিত হতে পারে। নদী সুরক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে হালদা নদীর উপকারিতা হারিয়ে যাবে, মা মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হবে এবং স্থানীয় পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পরিবেশ সচেতন এলাকাবাসী। তারা দ্রুত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।












