আমার বাংলাদেশ বহু যুগের অন্ধকার পেরিয়ে
অনেক ত্যাগ, আত্মদানের পর একটি রাঙা প্রভাত।
চারুবালার মা কতকাল আলো দেখেনি!
অসুস্থ, জড় হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল;
উঠে বসে, দেখে –
পুব আকাশটা লাল হয়ে আছে।
সাগর, মহাসাগর, মরুভূমি, পর্বত, উপত্যকা,
অরণ্যের ভিতর দিয়ে ঠিকরে আসে রোদ্দুর কণা।
মাঠের পরে মাঠ, বনের পরে বন, পাহাড়ের পরে পাহাড়,
সৃষ্টিতে বিস্ময়!
একজন শিল্পীর হাতে আঁকা নির্বাক ছবি।
এখানে এসেছে মোগল, পাঠান, আরব্য, পারসিক,
এসেছে ডাচ, ফরাসি, স্পেন, ইংরেজ, পর্তুগিজ।
লুঠেছে বাংলার শস্যক্ষেত্র, মোহর, রত্ন, ধন,
গরীব থেকে গরীব হয়েছে বাংলার জনগণ।
উর্দু নাকি অভিজাত শ্রেণি পাকিস্তানীর ভাষা!
বাংলা-বাঙ্গাল দমিয়ে রাখবে মনে ছিল এই আশা।
গণতন্ত্রের ভাষা নাহি বোঝে রক্ত পিপাসু দৈত্য,
বাংলার ছেলের মসনদ জয় মানিতে পারে না সত্য।
আমার বাংলাদেশ
হাজার বছরের শোষিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস;
শোষণের বিরুদ্ধে শ্লোগান,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,
আগুনের বিরুদ্ধে ফুলকি,
বজ্রের বিরুদ্ধে বিজলি,
বুলেটের বিরুদ্ধে রক্ত,
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্য,
অসাম্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা।
বাংলা আমার শরীয়তুল্লাহর প্রতিবাদী ঈমানী লাঠি,
বাংলা আমার তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা ঘাঁটি।
বাংলা আমার মজনু শাহ, বীর ফকির সন্যাসী,
বাংলা আমার মুক্তিকামী সিধু,কানু আদিবাসী।
বাংলা আমার বিপ্লবী বীর প্রীতিলতা, সূর্যসেন;
শত্রুর বুকে দাঁড়িয়ে বাংলা বাজায় বিজয় সাইরেন।
আমার বাংলাদেশ
রেসকোর্স মাঠে এক মহাকাব্যের স্ফূরণ;
কবিতার বুকে হঠাৎ জ্বলে উঠা দাবানল,
বাঁধ ভাঙ্গা জনতার স্রোত;
অগণিত শোষিতের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত;
লাখো কন্ঠে উচ্চারিত ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির প্রদীপ্ত শ্লোগান,
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমার মিলিত স্রোতের তুমুল গর্জন;
নতুন আনকোরা পতাকার পতপত শব্দ;
বজ্রকন্ঠের ঘোষণা, ‘রক্ত যখন দিয়েছি
আরো দেব।’
একটি কবিতার জন্য রাজপথে যন্ত্রদানবের প্রলয়ংকরী চিৎকার,
একটি পতাকার জন্য পুরনো জং ধরা রাইফেল কাঁধে নিরন্তর ছুটে চলা,
একটি মানচিত্রের জন্য অহর্নিশ যুদ্ধ,
একটি নিষ্পাপ হাসির জন্য চৌদ্দকোটি নয়নের অবিরাম অশ্রুধারা,
এক থালা মোটা চালের ভাতের জন্য সাগরের উত্তাল গর্জন,
একটি মোটা তাঁতের শাড়ির জন্য দুই লক্ষ বার সম্ভ্রম হানি,
একটি স্বাধীনতার জন্য তিরিশ লক্ষ লোহিত সাগরের
মিলিত স্রোতের নির্বাক আর্তনাদ।
বাংলা আমার রবি ঠাকুরের অমর কবিতারাশি,
‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
বাংলা আমার কাজী নজরুলের বিদ্রোহী, অগ্নিবীণা,
‘অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।’
বাংলা আমার বঙ্গবন্ধুর বিদ্রোহ- প্রেম ভাষণ,
বাঙালির দেশ, বাঙালি বুঝিবে, বাঙালি করিবে শাসন।
আমার বাংলাদেশ,
এক টুকরো সোনালি স্বপ্ন;
একটি আঁকাবাঁকা মানচিত্র;
একজন কবির তর্জনীর ইশারায় অবাক সূর্যোদয়।