অবসরে পাঠানোর একদিনের মাথায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান সোহায়েল গ্রেপ্তার, ৪ দিনের রিমান্ডে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ আগস্ট, ২০২৪ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর একদিনের মাথায় চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েলকে গ্রেপ্তার করে চারদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। যুবদল নেতা নবীন তালুকদার হত্যার ঘটনায় পল্টন থানায় রুজুকৃত মামলাটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকেও গ্রেপ্তার করে একই সাথে রিমান্ডে আনা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) সোহায়েলকে বনানী থেকে আটক করে নিয়ে যান ডিবি সদস্যরা। পরে তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়। ডিএমপির পল্টন থানায় যুবদল নেতা নবীন তালুকদার হত্যা মামলায় রিয়ার অ্যডমিরাল (অব.) সোহায়েল ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকেও রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল তাদেরকে আদালতে হাজির করে পল্টন থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে এসআই নাজমুল বলেন, ‘আসামী দুজন ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও মাস্টার মাইন্ড। তাদের পরিকল্পনায় ও মদদে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে মো. নবীন তালুকদারকে হত্যা করে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

মামলায় রাষ্ট্র পক্ষকে সহায়তা করার জন্য শুনানি করেন বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আসামিদ্বয় এজাহারভুক্ত নন। তবে তাদের একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও অপরজন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় তাদেরকে সর্বোচ্চ জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

আদালত সূত্র জানায়, শুনানির সময় দুই আসামি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন। তবে তাদের কণ্ঠ এতটাই অনুচ্চ ছিল যে এজলাসের পেছন থেকে তা বোঝা যায়নি। প্রায় ২০ মিনিট শুনানি শেষে দুজনের জন্যই চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এম সোহায়েলকে সোমবার রাতে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর নৌবাহিনী এই ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়।

২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ সোহায়েল কমোডোর থেকে রিয়ার অ্যাডমিরালে পদোন্নতি পান। অভিযোগ ওঠে, কোনো জাহাজ বা ঘাঁটি কমান্ড কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কোর্স না করেই শেখ হাসিনা সরকারের অনুগ্রহভাজন হিসেবে রিয়ার অ্যাডমিরালে পদোন্নতি পান তিনি।

মোহাম্মদ সোহায়েল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বছরের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট বন্দর চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে এম সোহায়েলকে নৌবাহিনীর ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিনের কমান্ডার হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। সেখান থেকে গত সোমবার তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছর মোহাম্মদ সোহায়েল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ডিরেক্টর ছিলেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়ও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অপরদিকে একই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আহমদ হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের পাঁচ বারের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন তিন বার সহসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই কারণে গতি নেই সড়ক সংস্কারে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ২৯০ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে সিভিল সার্জনের নির্দেশনা