অবশেষে হচ্ছে সুয়্যারেজ সিস্টেম

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে পরিকল্পিত সুয়্যারেজ সিস্টেমে প্রবেশ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা পুরো নগরীকে ছয়ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্যায়ে অন্তত বিশ লাখ মানুষকে সুয়্যারেজসিস্টেমের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। পুরো প্রকল্পের কাজকে তিনভাগে বিভক্ত করে আহ্বান করা হয়েছে টেন্ডার। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির উপর দুইটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন এবং ১৮০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুয়্যারেজসিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোন সুয়্যারেজসিস্টেম নেই। ৬০ বর্গমাইলের অন্তত ৬০ লাখ মানুষের এই নগরীতে প্রতিদিনই শত শত টন পয়োবর্জ্য সরাসরি নগরীর ড্রেন হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়ছে। মহানগরীর বভিন্ন বাসা বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক থাকলেও মুলতঃ এক পর্যায়ে বর্জ্য চলে আসে নালায়, যা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে। তাছাড়া শহরে ২০ হাজারেরও বেশি বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের অন্তত অর্ধেক সেপটিক ট্যাংকের নিচে ফুটো রয়েছে। যেখান দিয়ে বর্জ্য অনায়াসে ভবনের পাশের ড্রেনে এসে পড়ে। এই অবস্থার অবসানে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোপূর্বে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত সুয়্যারেজ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ইরিনকো নামের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। মালয়েশিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ডেপকন, আইডব্লিউএম এবং বেটস মিলে গত বছরের নভেম্বর থেকে নগরীতে কাজ শুরু করে। চট্টগ্রাম মহানগরীকে ছয়টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করে একটি ক্যাচমেন্টের ব্যাপারে বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন থেকে শুরু করে প্রকল্প ব্যয় এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি করা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রনীত ডুকুমেন্টস অনুযায়ী গত সপ্তাহে তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সর্বমোট ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজকে তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে একটি অংশে হালিশহরের চৌচালায় দুইটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। যার একটিতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আনা বর্জ্য প্রতিদিন নয় কোটি লিটার পরিশোধন করে পরিবেশ সম্মতভাবে সাগরে ফেলে দেয়া হবে। অপর প্ল্যান্টটিতে ফেক্যাল প্লাসের ( বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য) মাধ্যমে সংগৃহীত দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে।
এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুরো নগরীকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে আমরা কাজ করছি। শুরুতে আগ্রাবাদ, হালিশহর, নিউমার্কেট, পাথরঘাটা, সদরঘাট, পাঠানটুলি, চৌমুহনী, লালখানবাজার, ওয়াসা মোড়, কাজীর দেউরীসহ সন্নিহিত অঞ্চলের বাসা বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের পাইপের সাথে সুয়্যারেজ সিস্টেমের পাইপের সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হবে। এতে করে সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য সরাসরি সুয়্যারেজের পাইপে চলে যাবে। কিচেনের গ্রে ওয়াটার এবং টয়লেটের ব্ল্যাকওয়াটারসহ সব ধরনের বর্জ্য সরাসরি গিয়ে সুয়্যারেজের পাইপের মাধ্যমে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে যাবে। তখন সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে বলেও ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম মন্তব্য করেন।
হালিশহরের দুইটি প্ল্যান্টের একটিতে এভাবে পাইপের মাধ্যমে সংগৃহীত দশ কোটি লিটার বর্জ্য প্রতিদিন পরিশোধন করা যাবে। অপরদিকে যেসব ভবনে পাইপ বসানোর সুযোগ থাকবে না সেইসব ভবন থেকে বিশেষ গাড়ির সাহায্যে বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই বর্জ্য গাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হবে হালিশহরে। গাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্যের অন্তত তিনশ’ টন প্রতিদিন পরিশোধন করার সক্ষমতা থাকবে দ্বিতীয় প্ল্যান্টের। প্ল্যান্ট দুইটি নির্মাণের পাশাপাশি পাইপ লাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ তিনটি পৃথক ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ২৮ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি এই তিনটি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম জানান, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেয়ে সুয়্যারেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অনেক কঠিন। চট্টগ্রামে সুয়্যারেজ সিস্টেমের প্রকল্প বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেখানে রাস্তা আছে সেখানে পানির পাইপ ১দশিক ২ মিটার বা ৪ ফুট গভীরে স্থাপন করলে হয়ে যায়। কিন্তু সুয়্যারেজের পাইপ বসাতে হবে সর্বোচ্চ ১২ মিটার বা চল্লিশ ফুটেরও বেশি নিচে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পাইপের স্তর ঠিক রাখার জন্য নগরীর কোন কোন এলাকায় চল্লিশ ফুট মাটি খুঁড়েই পাইপ স্থাপন করতে হবে। এটা না করলে বর্জ্য পাইপের পরিবর্তে ম্যানহোল দিয়ে উপরে উঠে আসবে।
এই ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ্‌র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা সব গুছিয়ে এনেছি। টেন্ডারও আহবান করা হয়েছে। করোনার জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। মালয়েশিয়া থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসতে পারছিলেন না। অবশেষে তারা এসেছেন। এখন আর আমাদের কোন সংকট নেই বলে মন্তব্য করে ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল্লাহ জানান, আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করবো। বহু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে রূপান্তরে সুয়্যারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আমরা এখন সেই সুয়্যারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আগামী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছুটা বাড়তি সময় লাগবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশ আজ স্বনির্ভর : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা