খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম ও প্রত্যন্ত জনপদ লক্ষীছড়ি। পাহাড় ঘেরা এই জনপদের অনেক গ্রামে এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। সুউচ্চ পাহাড় থাকায় গ্রামীণ রাস্তাও এখনো তৈরি হয়নি। পায়ে হেঁটে পাহাড় ডিঙিয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করে এসব এলাকা বাসিন্দারা। যুগের পর যুগ জনবিচ্ছিন্ন এসব জনপদের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে একেবারেই বঞ্চিত। চিকিৎসাহীনতায় প্রায় ৫০ বছর পার করেছেন লক্ষীছড়ির ইউনিয়নের শুকনাছড়িসহ আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ। এই গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে সময় লাগে অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। হাটের দিন ছাড়া এসব গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরে আসে না। তবে কেউ অসুস্থ হলে পাড়ি দিতে হয় ‘বন্ধুর’ পথ। তবে গুরুতর কেউ অসুস্থ হলে এতো দীর্ঘ পথ হেঁটে আসা সম্ভব হয়না। এরকম বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হলেও অবশেষে দুর্গম বিচ্ছিন্ন এই জনপদে স্বাস্থ্য সেবার এমন অবহেলিত দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়নের শুকনোছড়িতে নির্মিত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হচ্ছে। মঙ্গলবার লক্ষীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থ হস্তান্তর করা হয়। কোন জেলা প্রশাসক এই প্রথম দুর্গম কোন জনপদে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি।
১নং লক্ষীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীল চাকমা জানান, শুকনোছড়ি, বেলক্ক পাড়া, গরগজ্যাছড়ি, হাতিছড়া, টুল্যাপাড়া, জুরমনি পাড়া, বিজি কিজিং মধ্য পাড়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এসব এলাকায় এতোদিন কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ছিল না। সাধারণ জ্বর হলেও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে উপজেলা সদরে আসতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। এর আগে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের দাবি জানালেও স্থাপিত হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও জেলা প্রশাসক স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।
লক্ষীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসিন জানান, শুকনোছড়ি অত্যন্ত দুর্গম একটি জনপদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। এসব এলাকার মানুষ পাহাড় ডিঙিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। বর্ষায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে অন্তত একদিন নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, লক্ষীছড়ির চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত শুকনোছড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে এটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সেবা প্রদান করা হবে।












