দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বস্তাবন্দি থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরির বইগুলো অবশেষে ফিরে গেল আপন ঠিকানায়। লালদীঘির দক্ষিণ পাড়ে নির্মিত নতুন ভবনে ঠাঁই হয়েছে দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর। নতুন গ্রন্থাগারের তাকগুলো সাজানো হয়েছে অযত্নে থাকা বইগুলো দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে এল ১১৬ বছরের পুরনো চট্টগ্রামের প্রথম পাবলিক লাইব্রেরিটির।
গতকাল বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত ভবনে পাবলিক লাইব্রেরি উদ্বোধন হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ কাজী মোজাম্মেল হক, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া ও প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহামেদ। ১৯০৪ সালে পাবলিক লাইব্রেরিটির যাত্রা শুরু হয়। যে ভবনে লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয় ওই ভবনটি ১৮৫৮ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পৌরসভার অফিস ১৯২৩ সালে আন্দরকিল্লায় স্থানান্তর করা হলেও পাবলিক লাইব্রেরি লালদীঘিতেই থেকে যায়। ২০১৭ সালে লাইব্রেরি ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে আধুনিক বহুতল ভবন নির্র্মাণের উদ্যোগ নেয় চসিক। এ জন্য একই বছরের অক্টোবর মাসে লাইব্রেরির প্রায় ৩৫ হাজার বই সংরক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিবিরহাটস্থ চসিক আরবান হেলথ কমপ্লেঙ সেন্টারে। সেখানে বস্তবন্দি রাখা হয় বইগুলো। পরে জাইকার অর্থায়নে নির্মিত হয় সাত তলা ভবন। গত ২৬ জুলাই এ ভবনের উদ্বোধনও হয়। তবু বইগুলো নিয়ে এসে লাইব্রেরি চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল না। গত ২৫ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘অযত্নে দুর্লভ বই সাময়িকী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে চসিক। প্রশাসক নির্দেশ দেন লাইব্রেরিটি চালুর। সর্বশেষ গতকাল নতুন ভবনে উদ্বোধন হল লাইব্রেরির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খ্যাতিম্যান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি প্রাচীনতম গ্রন্থাগার আলজেরিয়ার মতই। ছাত্র অবস্থায় এই লাইব্রেরিতে এসে নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আবিস্কৃত করি। তিনি বলেন, লাইব্রেরি জ্ঞানের আলোকবর্তিকা জ্বালায়। নবযাত্রা শুরু হওয়া সিটি কর্পোরেশনের এই গ্রন্থাগারটিও বর্তমান-ভবিষ্যতকে আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দেবে। তিনি আরো বলেন, এই লাইব্রেরিতে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের অমূল্য সংগ্রহ আছে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রবাসী, পূরবী, সওগাত, মোহম্মদী, শনিবারের চিঠিসহ অনেক প্রকাশনা ও গেজেট পেটেন্ট এই লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। আমার প্রত্যাশা এই লইব্রেরি চট্টগ্রাম ও দেশজুড়ে জ্ঞানের অলো ছড়াবে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের মা স্নেহ লতা সেন বেথুন কলেজে কৃতি ছাত্রী হিসেবে মহাভারত রামায়ণসহ কিছু মহাগ্রন্থ উপহার পেয়েছিলেন।
এগুলো আমার জীবনের শুদ্ধ পাঠ। এসময় তিনি অবিভাবকদের তাদের সন্তানদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানান। ড. অনুপম সেন আরো বলেন, চসিক প্রশাসক সুজন মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। আমি নিজে তা দেখেছি। অল্প সময়ে সুজনের অনেক কাজের মধ্যে এই লাইব্রেরিটার উদ্বোধন অন্যতম একটি কাজ। এই লাইব্রেরিতে আছে বিচিত্র বইয়ের সমাহার। খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আজ আমার জীবনের আনন্দের দিন। কারণ নগরীর জ্ঞানপিপাসু মানুষের জন্য লইব্রেরিটি উদ্বোধন করতে পারলাম। ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর জাতীর শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূণ্য করতে চেয়েছিলো। আজ আমরা এই দিবসে জ্ঞানের দুয়ার খুলে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ তাঁর কন্যার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন চট্টগ্রাম নগরীর আলাদা বৈশিষ্ঠ্য আছে। এই শহরকে নতুন প্রাণ নতুন অঙ্গিকে সাজাতে চেয়েছিলেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্র্রেরির এই উদ্বোধন মহিউদ্দীন চৌধুরীর অত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও উপহার।