অবশেষে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা জনসনের

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৮ জুলাই, ২০২২ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দলের ভেতরে বিদ্রোহ, একের পর এক মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতার পদত্যাগের মধ্যে অনিবার্য পরিণতি মেনে নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে জনসন তার পদত্যাগের ভাষণে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্বও হারাচ্ছেন তিনি।
তবে জনসন বলেছেন, কনজারভেটিভরা নতুন নেতা ঠিক করার আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনসন নতুন একটি মন্ত্রিসভাও নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আর এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সময় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের ইচ্ছাটা পরিষ্কার। একজন নতুন নেতা হওয়া দরকার- এটি স্পষ্টতই এখন কনজারভেটিভ এমপিদের ইচ্ছা।
এই নতুন নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া উচিত এবং এর সময়সীমা আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানান জনসন। এ প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসও। জনসন বলেন, রাজনীতিতে আদৌ কেউই অপরিহার্য নয়। আমাদের চমৎকার ব্যবস্থায় আরেকজন নেতা তৈরি হয়ে যাবেন। নতুন নেতাকে যতটা সম্ভব সমর্থন করার আশ্বাস দেন তিনি। জনসন এই বিবৃতি দেওয়ার সময় তার পদত্যাগের ঐতিহাসিক ঘোষণা শুনতে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে সমবেত হয় জনতা। ভাষণে জনসন তাকে প্রধানমন্ত্রিত্বের বিপুল সম্মানে ভূষিত করার জন্য ব্রিটিশ জনগণকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এবং বলেছেন, এখন থেকে নতুন নেতা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত জনগণের সেবা করে যাবেন তিনি। তবে কনজারভেটিভ পার্টির আরও বেশিসংখ্যক এমপি এখন বলছেন, নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া পর্যন্তও অপেক্ষা করে না থেকে জনসনের এক্ষুনি বিদায় নেওয়া উচিত।
বিরোধীদল লেবার পর্ার্টি বলছে, জনসন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে থেকে যেতে পারেন না। থাকলে তারা পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে চেষ্টা করবেন। অনেকেই বলছেন, জনসন নিজ দলে আস্থা হারানোয় তার উচিত এক্ষুনি তার উপপ্রধান ডমিনিক রাবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। লেবার নেতা কির স্টারমার বলেছেন, কনজাভেটিভ পর্ার্টি এ মুহূর্তেই জনসনকে না সরালে তিনি পার্লামেন্টে আস্থা ভোট ডাকবেন। ‘মাসের পর মাস এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বসে থাকা যায় না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আগামী অক্টোবরে দলীয় সম্মেলনে দায়িত্ব নেওয়া নতুন নেতারই প্রধানমন্ত্রী পদে জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওযার কথা রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালিত ইউগভ জরিপে দেখা গেছে, জনসনের উত্তরসূরি হিসাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকেই পছন্দ করছেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। এরপর তালিকায় আছেন, জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মোরডান্ট এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, দলে বিদ্রোহীদের পাশাপাশি নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীরাও জনসনকে ছেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলে তার সরকার অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এ পরিস্থিতিতে পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো পথ জনসনের জন্য খোলা ছিল না।
দলে কয়েকদিনের টানাপোড়েনের পর ৫৮ বছর বয়সী জনসনের পাশে এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে; অথচ তিন বছর আগেই তিনি বিপুল ব্যবধানে টোরিদের ক্ষমতায় এনেছিলেন, যুক্তরাজ্যের এমন অনেক এলাকাকে কনজারভেটিভদের পক্ষে নিয়ে এসেছিলেন, যেসব এলাকা ঐতিহাসিকভাবে কখনোই তাদের পক্ষে ছিল না।
বরিসের পতনে পাঁচ কারণ : ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক অনুসন্ধানে বরিসের পদত্যাগের পেছনে ৫টি কারণকে জোর দিয়েছেন। ১. ব্রিটেনের সাবেক ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিনচারের কিছু বিষয়ে সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন বরিস জনসন। গত ২৯ জুন তিনি লন্ডনে একটি প্রাইভেট সদস্যদের ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেন। কার্যত নিজেকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে দেন। পিনচারের বিরুদ্ধে দুজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরার অভিযোগ আনা হয়। কনজারভেটিভ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও এমন অভিযোগের খড়গ পড়ে বরিসের ওপর। বলা হচ্ছিল, তিনি তার দলের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখেন না। ২. বরিস সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে মদ পার্টির আয়োজন করে। ২০২০ সালে লকডাউন নিয়ম ভেঙে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। এতে তাকে জরিমানাও দিতে হয়েছিল। ৩. চলতি বছর যুক্তরাজ্যে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। যার বর্তমান হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ। যে কারণে দেশটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়। নতুন এ সংকটের দায়ও বরিসের ওপর পড়ে। ৪. হাউস অফ কমন্স কমিটির তৎকালীন রক্ষণশীল সংসদ সদস্য ওয়েন প্যাটারসনও প্রধানমন্ত্রী বরিসকে সমালোচনার মুখে ফেলেছিলেন। ঘটনাটি ২০২১ সালের। এ বছর প্যাটারসনকে ৩০ দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওয়েন প্যাটারসনের বিরুদ্ধে লবিং নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। তাকে যে সংস্থাগুলো অর্থ প্রদান করতো, তাদের সুবিধা দেওয়ার মতো অপরাধ করেছিলেন সাবেক এ ব্রিটিশ রাজনৈতিক। ৫. ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বরিস জনসন ব্রেঙিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পন্ন করেন। কিন্তু তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে ডাউনিং স্ট্রিটে ফোকাস ও ধারণার অভাব ছিল বলে সমালোচনা শুরু হয়। বরিসের সাবেক উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসও বিষয়টি নিয়ে তাকে অভিযুক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি হল ৩৪ বিলাসবহুল গাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ সংকট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলার আভাস