অবশেষে সচল কোটি টাকার সেই ম্যামোগ্রাফি মেশিন

আজ থেকে মিলবে সেবা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে সচল হল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কোটি টাকার সেই ম্যামোগ্রাফি মেশিন। নারীর স্তনে টিউমার-ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক এই যন্ত্র। যান্ত্রিক ত্রুটিতে গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় ৭ মাস ধরে অকেজো ছিল মেশিনটি।
এর আগে পরীক্ষার অপরিহার্য উপকরণ ফিল্ম বা নেগেটিভ সংকটেও প্রায় ৮ মাস অচল ছিল এ মেশিন। মাসের পর মাস অকেজো পড়ে থাকা এ মেশিন নিয়ে গত ২৯ মে দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘৩৩ মাসে ৩১ মাসই অচল সেই ম্যামোগ্রাফি মেশিন/অকেজোতেই শেষ হচ্ছে ওয়ারেন্টি সময়সীমা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সোমবার থেকে মেশিনটি সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিউটেক জিটি লিমিটেডের লোকজন। টানা তিন কর্মদিবসের চেষ্টায় গতকাল বুধবার মেশিনটি সচল করতে সক্ষম হয় তারা। এতে করে প্রায় ১৫ মাস পর অবশেষে কোটি টাকার মেশিনটি সচল হল। মেশিনটি সচল হওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে সোমবার থেকেই কাজ শুরু করে। বুধবার তারা মেশিনের সার্ভিসিংয়ের কাজ শেষ করেছে। মেশিনটি এখন কাজ করছে বলে তারা জানিয়েছে। বিভাগের চিকিৎসকরাও মেশিনটি সচল হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সচল হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকেই ম্যামোগ্রাফি মেশিনের সেবা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার।
রেডিওলজির বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফিল্ম সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সব মিলিয়ে টানা ১৫ মাস ধরে অকেজো ছিল এই ম্যামোগ্রাফি মেশিন। এর আগেও যান্ত্রিক ক্রটিসহ নানা জটিলতায় মেশিনটি দফায় দফায় অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেশিনের সেবা চালু করা হয়। তবে উদ্বোধনের পর থেকে মেশিনটি সবমিলিয়ে তিন মাসও সচল থাকেনি। কয়দিন যেতে না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে।
কোটি টাকার এ মেশিন দিনের পর দিন অকেজো থাকার কারণ হিসেবে এর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতাকে দুষেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেশিনটি স্থাপন থেকে শুরু করে এর ফিল্ম সংকট এবং ফিল্ম যোগাড়, পরবর্তীতে মেশিন চালু করতে না পারাসহ সার্বিকভাবে মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের অদক্ষতার কারণেই মেশিনটির সেবা চালু করতে বিলম্ব হয়। পরে ফিল্ম সংকটেও ভুগতে হয়। দফায় দফায় যোগাযোগ করেও তাদের কাছে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে হাসপাতাল প্রশাসন।
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের তথ্যমতে, রেডিওলজি বিভাগে সিঙ্গেল স্তনের ম্যামোগ্রাফ টেস্টে ৪শ টাকা এবং ডাবল স্তনের টেস্টে ফি ৮০০ টাকার বেশি নয়। কিন্তু প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই ফি সিঙ্গেল টেস্টে দেড় হাজার এবং ডাবল টেস্টে তিন হাজার টাকার কম নয়।
উল্ল্লেখ্য, নারীর স্তনে টিউমার-ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক এ মেমোগ্রাফি মেশিন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্তন পরীক্ষায় এমন অত্যাধুনিক যন্ত্র পায়নি চমেক হাসপাতাল। তবে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য একটি করে মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতালি থেকে আমদানি করা দুটি মেশিনের খরচ পড়ে ৩ লাখ ৮১ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা তিন কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার ৯২১ টাকা।
হিসেবে প্রতিটির মূল্য ১ কোটি ১৬ লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক এ যন্ত্র চমেক হাসপাতালে বাঙবন্দি ছিল প্রায় বছর ধরে! হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের একটি ছোট্ট কক্ষে পড়ে ছিল মেশিনটি। পরবর্তীতে হাসপাতালে আনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট অবশেষে সেবা চালু হয় কোটি টাকা মূল্যের ম্যামোগ্রাফি মেশিনটির। তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে মেশিনটির সেবা উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলায়ন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধফ্লাইট নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত হলো নতুন ৭ দেশ