নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সিভাসু থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিভাসুর নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সিভাসুর নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রফেসর ড. লুৎফর রহমানকে আগামী ৪ বছরের জন্য এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এতদিন ভেটেরিনারি মেডিসিনের অনুষদের ডিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তার নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর হবে। তবে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর (আচার্য) প্রয়োজনে যেকোনো সময় এই নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে পারবেন। তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতাদি পাবেন; বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
সিভাসুর নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান আজাদীকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টির আধার। এখান থেকে জ্ঞান সৃষ্টি হয়। আমরা চেষ্টা করবো শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। গবেষণার মাধ্যমে সিভাসুকে দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রচেষ্টা থাকবে। আমাদের দেশে ১৪টি কৃষিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এগুলোর মধ্যে সিভাসুকে সর্বোচ্চ স্থানে আনার ব্যাপারে কাজ করবো। আমরা যে গবেষণা করবো সেটা যেন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সবাই যাতে সেটার উপকার ভোগ করতে পারে সেটা নিয়ে কাজ করবো। উপাচার্য বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে আন্দোলনের কারণে একাডেমিক যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুত স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। একাডেমিক কোনো ধরনের জটিলতা আর থাকবে না। সিভাসু শিক্ষক–কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বিগত হাসিনা সরকারের আমলে সিভাসুতে অবৈধভাবে অসংখ্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। সরকার পতনের পর সেটা বাতিলের দাবি উঠে। এই ব্যাপারে নতুন উপাচার্য বলেন, এটা তো তদন্তের ব্যাপার আছে। আমরা এই ব্যাপারে খতিয়ে দেখবো। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা যায়, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনাটমিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পোস্ট–ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ২০০১ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ তিনি গবেষণা ও অধ্যাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি চারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটামি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। উপাচার্য পদে নিযুক্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
তবে শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চেয়েছি। সেটা পেয়েছি; সেজন্য আমরা আনন্দিত। এজন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের শর্তের মধ্যে একটি ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রেডের শিক্ষক থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে কিন্তু সেটি মানা হয়নি। এছাড়া উপাচার্যের একাডেমিক ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষার্থীরা।