নগরীর বক্সিরহাটস্থ নাথ জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা বন্ধকী স্বর্ণ অবশেষে ফেরত পেতে চলেছেন ৬১ দোকানি। ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে স্বর্ণগুলো জব্দ করেছিল। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি এই ১০৪ কেজি স্বর্ণ নাথ জুয়েলার্সের উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই নির্দেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুদাম থেকে এসব স্বর্ণ ফিরিয়ে দিচ্ছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা টাস্কফোর্স নাথ জুয়েলার্সে অভিযান পরিচালনা করে ১০৪ কেজি স্বর্ণ, সাড়ে ৩ কেজি রৌপ্য ও প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করে। এ ঘটনায় পরদিন কোতয়ালী থানায় নাথ জুয়েলার্সের মালিক রামকৃষ্ণ নাথকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে দাখিল করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্য মানিল্যান্ডিং বিজনেসের আওতায় নিজের এবং ২৩৪ জন বন্ধকদাতার স্বর্ণ ওই প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত ছিল। চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে রামকৃষ্ণ নাথকে অব্যাহতি দেন এবং জব্দকৃত স্বর্ণ তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ওই সময় আদালতে আবেদন করে ৪৬ জন বন্ধকদাতা স্বর্ণ ফেরত চেয়ে আবেদনও করেন। তাদেরকেও স্বর্ণ ফেরত দিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত।
এরপর নাথ জুয়েলার্সের মালিকের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলা বাতিল চেয়ে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট মামলা বাতিল করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি রায় দেন। রায়ে জব্দকৃত স্বর্ণ থেকে নিজের স্বর্ণ রেখে বন্ধকদাতা ২৩৪ জনকে স্বর্ণ ও রৌপ্য ফেরত দিতে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আপিল করা হয়। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় মারা যান রামকৃষ্ণ নাথ। পরে তার স্ত্রী পারুল নাথ এবং দুই পুত্র সঞ্জয় নাথ ও পলাশ নাথ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রায়ে পরিবারের পরিবর্তে মটগেজ রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই স্বর্ণ বণ্টনের আদেশ দেওয়া হয়। বাকিটা ওয়ারিশদের দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
আপিল বিভাগের এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন নাথ জুয়েলার্সের ওয়ারিশরা। পুনর্বিবেচনা আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ আগের রায় সংশোধন করে নাথ জুয়েলার্সের মালিকদেরকে জব্দকৃত স্বর্ণ বন্ধকদাতাদের মধ্যে বণ্টনের আদেশ দেন। কিন্তু আপিল বিভাগের এ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন বেশ ক’জন দাবিদার। পরে ওই রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। স্বর্ণ বন্ধক রেখে ধার নেওয়া অর্থ সুদ–আসলে পরিশোধের শর্তে জব্দ পণ্যগুলো ৬১ দোকানিকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসে আপিল বিভাগ থেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট মাস থেকে জব্দ তালিকা অনুযায়ী স্বর্ণগুলো প্রকৃত মালিকের হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলিউল্ল্যাহ ও সাদ্দাম হোসেন। এতে সহায়তা করছেন আদালতের জিআরও এসআই আবছার উদ্দিন রুবেলসহ সদস্যরা। এরই মধ্যে ১৩ কেজি স্বর্ণ ফেরত দেওয়া হয়েছে।