চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড স্থাপনে তোড়জোড় শুরুর কথা জানা গেছে আগেই। এ নিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠকও করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরও আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড হয়নি এতদিন। অবশেষে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে চমেক হাসপাতালে। হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি ভবনের ৮ম তলায় অর্ধশত শয্যার এ ওয়ার্ড প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে। চিকিৎসক–নার্স, কর্মচারির বিষয়টিও এরইমাঝে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় আলাদা এ ওয়ার্ডে সব রোগীর সংস্থান করা যাবে না। যার কারণে কেবল পুরুষ অথবা কেবল নারী রোগীদের আলাদা এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে সবমিলিয়ে ৮০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। কয়েকদিন এ সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা যে ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে তাতে ৫০/৬০ টি শয্যা রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সব রোগীর সংস্থান ওখানে হবে না। তাই আলাদা ওয়ার্ডে হয় পুরুষ নয়তো কেবল নারী রোগীদের রাখার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মঙ্গলবার (আজ) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। জায়গা সংকটের কারণে বড় পরিসরে ওয়ার্ড করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমাদের এমনিতেই জায়গা সংকট। সংকটের কারণে ওয়ার্ডের ফ্লোর ছাড়াও বারান্দা, এমনকি করিডোরে রেখেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আলাদা ওয়ার্ড করা আসলেই দুরূহ বিষয়। এরপরও আমরা ম্যানেজ করছি। বুধ–বৃহস্পতিবারের মধ্যে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু হবে বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
এর আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে একটি প্রস্তাবনাও দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবনায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়– হাসপাতালের নিচতলায় থাকা কোভিড ইউনিটে (করোনা ব্লক) বর্তমানে হাতে গোনা মাত্র ২/১ জন করে রোগী ভর্তি থাকছে। এই কয়েকজন কোভিড রোগীর জন্য পুরো ওয়ার্ডটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে হাতে গোনা এসব কোভিড রোগী আগের মতো চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা যায়। এতে করে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটটি খালি হলে সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। চমেক হাসপাতালের এই প্রস্তাবনা খারাপ না বলে ওই সময় মন্তব্য করেছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে (১৩ জুলাই) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় চমেক হাসপাতালে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রুপান্তরের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সেক্ষেত্রে কোভিড রোগীকে চমেক হাসপাতালের পরিবর্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বেশ কিছু কারণে সেটিও আর হয়নি। সর্বশেষ হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি ভবনের ৮ম তলায় আলাদা এ ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতালের ৫টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে– মেডিসিনের তিনটি (১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড) ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের দুটি ওয়ার্ড (৮ ও ৯)। এর মাঝে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার করে (এক পাশে রাখার ব্যবস্থা) আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। শিশু ওয়ার্ডেও এক পাশে রেখে রোগীদের চিকিৎসার কথা বলছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। তবে এক পাশে হলেও একই ওয়ার্ডের ভেতর হওয়ায় সাধারণ রোগীরাও থাকছেন পাশাপাশি। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক মশারির ভিতর থাকার কথা বলা হলেও তারা মশারির ভিতর থাকতে চান না। এতে করে সাধারণ রোগীরাও ঝুঁকিতে আছেন।
আরো ১০০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত : এদিকে ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭৬ জনে। আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৭৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মাঝে চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৯১ জন।