বছর ঘুরে আসত বইমেলা। তার অপেক্ষায় থাকতেন পাঠক, লেখক ও প্রকাশকগণ। কোভিড-১৯ সেই অপেক্ষা দ্বিগুণ করে। অবশেষে গতকাল রোববার পর্দা উঠে বইমেলার। অবসান ঘটে দীর্ঘ দুই বছরের প্রতীক্ষার। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বইপ্রেমীরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে ছুটে আসেন তারা। স্টলে স্টলে ঘুরে খোঁজ করেন পছন্দের লেখকের নতুন বই।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে তৃতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল বিকেলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী মেলা উদ্বোধন করেন। মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদন করা হয়েছে এবারের মেলা। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল আছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বই মানুষের হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে। চিত্তকে প্রসারিত করে। তাই প্রতিদিন বইমেলায় আসবেন, বই কিনবেন। একটি বই কিনে বাসার টেবিলে ফেলে রাখলেও দেখবেন, সেটা ঘাটতে ঘাটতে আপনার শিশু সন্তান একদিন বই পাগল কিশোরে পরিণত হয়েছে। বই খারাপ কাজ এবং অশালীনতা থেকে বিরত রাখবে। সুস্থ চিন্তাধারার একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে সহায়তা করবে। বিকশিত করবে সৃজনশীলতাকে।
তিনি বলেন, ভাষার মাস এলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। আমরাই একমাত্র জাতি যারা মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছি। তাই চলুন এ মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাই। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আছেন বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারছি, বইমেলা করতে পারছি। অথচ এমনও দিন গিয়েছে যখন বইমেলা ও বিজয় মেলা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। আজ সব বাধা কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন।
মেয়র বলেন, বিভিন্নভাবে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে একুশের বইমেলাকে ঘিরে। ইসলামিক, ধর্মীয় বই রাখা যাবে না-এমন প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমরা তো বলিনি ইসলামী বই রাখা যাবে না। অবশ্যই ইসলামী বই রাখা যাবে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, কোনো মৌলবাদী বই রাখা যাবে না। অনেক ইসলামী প্রকাশনা এখানে রয়েছে। কোনো মিথ্যা প্রপাগান্ডায় কান দেবেন না, গুজবে কান দেবেন না। জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা যারা, জঙ্গিবাদকে যারা উৎসাহিত করে, যে বই পড়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম জঙ্গিবাদে উৎসাহিত হয়ে সেই সমস্ত বই এ মেলাতে রাখা যাবে না।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার। অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক দুর্বার বাংলা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ড. নিছার আহমেদ মঞ্জু বলেন, কোভিডের কারণে মেলা শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গতবারের চেয়ে স্টল বরাদ্দ কম দেয়া হয়েছে। ইসলামি বই প্রকাশ করে এমন প্রকাশনার স্টলও রয়েছে।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, জনগণ রাস্তায় নামলে একদিনেই নামফলকে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, উদ্বাধনের পরও অনেকগুলো স্টল সাজানোর কাজ চলছিল। মেলায় দর্শনাথীর সংখ্যা ছিল কম। তবে প্রকাশকদের আশা, আজ ২১ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় ভিড় বাড়বে।
কথা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী ইসমাইল হোসেন বলেন, আজ পাঠকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। আগামীকাল (আজ) বোঝা যাবে।
শৈলী প্রকাশনের আরিফ রায়হান বলেন, টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিন হিসেবে ঠিক আছে। ধীরে ধীরে মেলা জমে ওঠবে।
প্রথমা প্রকাশনের শিহাব জিশান বলেন, বেচাবিক্রি চলছে। কয়েকটি বিক্রি হয়েছে।
ইউপিএলের শংকর বলেন, মেলায় কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে। ওয়াশরুমে পানির ব্যবস্থা নেই। ভাঙা। মেলায় অংশ নেয়া প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের এতে সমস্যা হবে।
স্বাধীন প্রকাশনার হৃদয় হাসান বাবু বলেন, প্রথম দিন আমাদের পাঁচটি নতুন বই এসেছে।