চট্টগ্রাম আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে অবশেষে আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি), রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) ইস্যু করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইন্ডেন্টিং ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাঁচামাল আমদানির আইপি (্আমদানি অনুমতি) নিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানির আইপি এখনো ঢাকা থেকে নিতে হচ্ছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আজাদীতে চট্টগ্রাম আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ‘সেবা সংকুচিত, আছে মাত্র দুটি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। পরে চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতারা সব ধরনের আইপি অনুমতি চট্টগ্রাম থেকে অনুমোদন দেয়ার দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম দপ্তর থেকে ইন্ডেন্টিং ও চট্টগ্রামে সরকারের ২৮টি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাঁচামাল আমাদানির অনুমতি স্থানীয় নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই হিসেবে এ পর্যন্ত মোট ৫৫টি সেবার মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে তিনটি ও একটির আংশিক সেবা পাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানি অনুমতি (আইপি) ঢাকা থেকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানির অনুমতির ক্ষমতা আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তর দেয়া উচিত। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটি না করে কেবল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কাজের কাঁচামাল আমদানির অনুমতির ক্ষমতা চট্টগ্রাম দপ্তরকে দিয়েছে। এতে বাণিজ্যিক আইপি নিতে ঠিকই আগের মতো ঢাকায় দৌঁড়ঝাপ করতে হচ্ছে। এটি একধরনের লোক দেখানো সিদ্ধান্ত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তরে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে যেন সেবার পরিধি বাড়ানো হয়।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পের কাঁচামাল কিংবা যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমতি চট্টগ্রাম থেকে দেয়ার সিদ্ধান্তটি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
অনুমতি দিলে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানির আইপি চট্টগ্রাম থেকে দিতে হবে। আইপি ও চট্টগ্রাম দপ্তরের সেবার পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি লিখেছিলাম। বিষয়টি আবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ওএলএম’ নামের আমাদের নিজস্ব একটি সফটওয়্যার আছে। সেই সফটওয়্যারে এখনো পর্যন্ত সব ধরনের সেবা আমরা ইনপুট দিতে পারিনি। তবে শিগগিরই এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। তখন দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও আমাদের সেবাগ্রহীতারা অনলাইনে সেবা নিতে পারেন। আর চট্টগ্রাম দপ্তরের আইপি দেয়ার ক্ষমতা নেই, মানে তাদের ঢাকায় দৌঁড়াঝাপ করতে হয়, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রায় সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। এক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রাম থেকে আইপি নিতে গেলে তাদের আবার ওখানে আবেদন করতে হবে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আইপি ইস্যু ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুরোপুরি অনলাইন হলে তখন হয়তো চট্টগ্রাম দপ্তর থেকেও সরাসরি আইপি অনুমোদন নেয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানির অনুমতি ঢাকা থেকে নিতে হয়। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি, যৌথ বিনিয়োগ ও শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও শিল্প আইআরসি ও ইআরসি নিতে ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে অনুমোদনের পর চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র এসব সনদ ইস্যু করা হয়। অথচ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) চট্টগ্রাম কার্যালয় ও বস্ত্র অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় শিল্প আইআরসি অনুমোদনের জন্য আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ঢাকাকে সুপারিশ করে। অনুমোদন যদি চট্টগ্রাম অফিস থেকে নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে ব্যবসায়ীদের আর ঢাকায় অযথা সময় নষ্ট করতে হতো না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র না খুলে বিদেশ থেকে উপহার সামগ্রী কিংবা পণ্যের সেম্পল আনলে, সেক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের আগে সেই অনুমতি চট্টগ্রামে মিললেও এখন তা নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এছাড়া শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারখানার যন্ত্রপাতি আনতে ঋণপত্র (এলসি) লাগে না। সেক্ষেত্রে আমদানি অনুমতি (আইপি) নিলেই হয়ে যায়। বর্তমানে সেই অনুমতি নিতেও ঢাকায় দৌঁড়াতে হয়। আবার প্রবাসী পেশাজীবীরা আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে সেই ক্ষমতা ঢাকায় নেয়ায় এসব পণ্য আনার ক্ষেত্রেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া আমদানি অনুমতি ও বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স পারমিট নিয়ে এলসি ছাড়া পণ্য আমদানি করার অনুমতি এখন ঢাকা থেকে নিতে হচ্ছে। অন্ট্রাপো বা সাময়িক আমদানি বাণিজ্যের নিমিত্তে পণ্য আমদানির অনুমতিও ঢাকা থেকে নিতে হয়। পুনঃরপ্তানির লক্ষ্যে আমদানির অনুমতিও এক সময় চট্টগ্রাম থেকে হতো। তবে তা এখন নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানির পর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তা ফেরত আসলে বন্দর থেকে খালাস ও পুনঃরপ্তানির অনুমতি কিংবা ত্রুটিযুক্ত কাপড় ফেরত প্রদানের অনুমতিও নিতে হয় ঢাকা থেকে। শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটক পণ্য চালান খালাসে আবেদনও করতে হয় ঢাকা অফিসে।