দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অতীশ দিপংকর শ্রীজ্ঞান হল। গত প্রায় দুই মাস ধরে চলছিল শিক্ষার্থীদের আসন বণ্টন প্রক্রিয়া। গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় হলের সভাকক্ষে হলটির আবাসিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল–আমীন।
অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট এজিএম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং হলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিবাকর বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের জীবনী পাঠ করেন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. নূরে আলম। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জনি বড়ুয়া ও ভূবন চাকমা।
এসময় চবি উপাচার্য বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদেরকে দায়িত্ব প্রদানের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে আমরা দুটি আবাসিক হল চালু করতে সক্ষম হয়েছি; যা বিগত প্রশাসন দীর্ঘ সময় পার করেও চালু করতে পারেনি। তিনি বলেন, নতুন হলে উঠা অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। হলের সার্বিক কার্যক্রমে যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটা পৃথিবী। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জ্ঞান–বিজ্ঞানে এমন সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যাতে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় গিয়ে নিজের অবস্থান ও সক্ষমতা জানান দিতে পারেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত সম্পদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপাচার্য হলের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। তিনি হলে সিটপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে উপাচার্য সকলকে সাথে নিয়ে হলের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।
উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খান তার বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদ্ভাবনমুখী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে মাল্টিডিসিপ্লিন শিক্ষা ও মাল্টিকালচারাল পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। জ্ঞান, গবেষণা ও সৃজনশীলতার বিকাশে এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দেশি–বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকরা একত্রিত হয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ চিন্তা ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ের সুযোগ পাবেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আধুনিক পাঠক্রম, আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে হলে শৃঙ্খখলাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, চবির বিগত প্রশাসন এ হলে পর্যায়ক্রমে ৪ জন প্রভোস্ট নিয়োগ দানের পরও হলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। এটা বড় লজ্জার। বর্তমান প্রশাসন যোগ্য প্রভোস্ট নিয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবেশবান্ধব ও সবুজ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ আবাসিক হলের আশেপাশে গাছ লাগাতে হবে।
তিনি শিক্ষার্থীদেরকে শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রেখে হলে বসবাসের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, পরিচালক, বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অফিস প্রধান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।