অবরোধে নগরে যান চলাচল স্বাভাবিক, ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস

আতুরার ডিপোয় টেক্সি ও আনোয়ারায় বাসে আগুন বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের শেষ দিন গতকাল ভোরে নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ ও একটি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এর বাইরে নগর ও উপজেলায় আর কোনো ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন জায়গায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, অবরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের আরো ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে অবরোধ চলাকালে নগরে দিনভর যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত গাড়ি কম চললেও গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো। বাস, টেম্পো, সিএনজি, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন যানবাহনের চাপে যানজট লেগে যায় বিভিন্ন মোড়ে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গেছে ট্রেনও। তবে দূর পাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। চট্টগ্রাম জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বাসসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করেছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল করেছে। পাশাপাশি স্বল্প দূরত্বের বাসসহ অন্যান্য পরিবহনও চলাচল করেছে। স্বাভাবিক ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা। খোলা ছিল দোকানপাট, সরকারিবেসরকারি অফিস, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল কম।

এদিকে অবরোধ চলাকালে নগরে সর্তক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহাসড়কে টহলে ছিল বিজিবি। এছাড়া ‘শান্তি সমাবেশ’ করে বিভিন্ন অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ।

সিএনজি ও বাসে আগুন : গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আতুরার ডিপো এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয়ার পাশাপাশি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করা হয়। পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, রাস্তার পাশে অটোরিকশা রেখে চালক দোকানে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত অটোরিকশাটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ছাদের ওপরের অংশ পুড়ে যায়। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওমর ফারুক, আলমগীর ও রুবেল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, ভোর দিকে উপজেলা চাতরি চৌমহনী বাজারের উত্তরে ট্রাফিক পুলিশ বঙের কাছে মসজিদের পাশে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসটির মালিক নাইম উদ্দিন আজাদীকে জানান, বাসটি পার্কিং করা ছিল। কেইপিজেড শ্রমিক পরিবহন করা হত বাসটি দিয়ে। ভোরে আমার এক গাড়ি চালক ফোন করে জানায় বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসে দেখি আমার পুরো গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি আসার আগে ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে কাজ করছিল। পরে পুলিশের পরামর্শে আমি গাড়িটি মেরামত করতে শহরে গ্যারেজে নিয়ে যাই।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। আনোয়ারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার মং সুইনু মারমা বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে সাথে সাথে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।

ঝটিকা মিছিল : নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী আজাদীকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে নেতাকর্মীরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে আমাদের আরো ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বাহির সিগনাল ও সিএন্ডবি এলাকায় নগর বিএনপির সদস্য এরশাদ উল্লাহর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দুপুরে কাজির দেউরী ও অসকার দিঘির পাড় এলাকায়, সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের পূর্ব গেইট ও প্রবর্তক মোড় এলাকায়, পাহাড়তলী বাজারে, বিবিরহাট এলাকায়, কালামিয়া বাজার ও রাহাত্তার পুল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এছাড়া সকালে সিটি গেইট, উত্তর কাট্টলী, চান্দগাও আরকান সড়কে সিএন্ডবি পেট্রোল পাম্প এলাকা, বড়পোল এবং দুপুরে আগ্রাবাদ এঙেস রোডে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদ দলের নেতাকর্মীরা।

ধৃত ১০ : নগর বিএনপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, চাঁন্দগাও থানা ছাত্রদলের সদস্য রনি হোসেন ও চাঁন্দগাও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন, চকবাজার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল গফুর, পতেঙ্গা থানা ছাত্রদল নেতা মো. ফাহিম, ৪০ নং ওয়ার্ডের মো. ফোরকান ও মো. নোমান, ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. খান ও ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. হিরোসহ ১০ জনকে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

খসরুর মুক্তি দাবি চট্টগ্রামের পেশাজীবীদের : বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের ১০১ জন পেশাজীবী নেতা বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে সারা দেশ থেকে বিএনপির ৮ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে এর নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নছরুল কাদির, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এড. এ এস এম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, ড্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিনসহ ১০১ পেশাজীবী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ বিএনপির
পরবর্তী নিবন্ধটিকে রইল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা