বিএনপির ডাকে তৃতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল বুধবার নগরের টাইগারপাস–পাহাড়তলী সড়কে একটি টেম্পো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে শহরের কয়েক জায়গায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর বাইরে নগর ও উপজেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অবরোধ চলাকালে দিনভর নগরে যান চলাচল ও জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। অবরোধহীন দিনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ছিল যানজট। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার, চট্টগ্রাম–ঢাকা মহাসড়কেও গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত যান, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে নগর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। মহাসড়কে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো ছিল স্বল্প দূরত্বের এবং অভ্যন্তরীণ জেলার যান। এছাড়া স্বাভাবিক ছিল ট্রেন চলাচল।
টেম্পোতে পাথর নিক্ষেপ : খুলশী থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৭টার দিকে টাইগারপাস থেকে পাহাড়তলী যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী একটি টেম্পোতে পাথর ছুড়ে মারে অবরোধকারীরা। এতে কেউ হতাহত হননি। তবে টেম্পোটির সামনের কাচ ভেঙে যায়। এসময় পাথর নিক্ষেপকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয়। অবশ্য পুলিশ আসার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, খুলশী ও আকবরশাহ থানার সীমান্ত এলাকায় একটি টেম্পোতে পাথর ছুড়ে মারেন অবরোধকারীরা।
ঘরে বসে থাকলে খাব কী? : অবরোধ চলাকালে সকালে মুরাদপুর, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, চেরাগী, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, দুই নম্বর গেট, বায়েজিদ, জিইসিসহ বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক দিনের মত চলাচল করছে যানবাহন। বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, সিএনজি ও টেম্পোসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। অবশ্য সকালে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেছে। বিভিন্ন মোড়ে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
আন্দরকিল্লায় সৈকত নামে এক সিএনজি চালক আজাদীকে বলেন, অবরোধের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে খাব কী। সিএনজি চালিয়ে সংসার চালায়। গাড়ি না চালালে বউ–বাচ্চাদের খাওয়াব কী?
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবস্থা : আজাদীর মীরসরাই প্রতিনিধি জনান, মীরসসরাই সদর এলাকার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিল ঢিলেঢালা ভাব। সকাল থেকেই দূরপাল্লার যানবাহন না চললেও চট্টগ্রাম–বারইয়াহাট এবং ফেনী রুটে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকামুখী সিডিএম বাসও চলতে দেখা গেছে। মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গতকাল সন্ধ্যায় জোরারগঞ্জ এলাকায় মশাল মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবরোধকালে মীরসরাই থানা পুলিশকে মাঠে অধিক সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশবাহিনী যে কোনো বিশৃক্সখলা দমাতে সবসময় প্রস্তুত।
অবরোধের সমর্থনে মিছিল : সকালে খুলশী, জিইসি মোড় থেকে নাসিরাবাদ, দুপুরে বহদ্দারহাট আরাকান সড়কের সিএন্ডবি, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, আগ্রাবাদ চৌমুহনী, তুলাতলী বিশ্বরোড, পাহাড়তলী পুলিশ বিট রেলগেট, চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল, সিনেমা প্যালেস মোড়, খুলশী আমবাগান সড়ক, ডবলমুরিং চৌমুহনী, সিটি গেট, বায়েজিদ ২ নম্বর জালালাবাদ সড়ক, প্রবর্তক মোড়, এক কিলোমিটার, বাকলিয়া রাহাত্তার পুল, আকবর শাহ চক্ষু হাসপাতাল এলাকা, চকবাজারস্থ কাঁচা বাজার এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও বিক্ষোভ হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
গ্রেপ্তার : নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী আজাদীকে বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ পালিত হয়েছে। নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও পিকেটিং করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ বিএনপির আরো ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
ইদ্রিস আলী জানান, চকবাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুজ্জামান জুনু, পাথরঘাটার মো. আলতাফ হোসেন, মো. আরিফ ও মো. সাগর, এবং চান্দগাঁও থানা যুবদলের মোহাব্বত হোসেন, পাঁচলাইশ থানা যুবদলের মোহাম্মদ রেজাউল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাকিব ফয়সাল মীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইদ্রিস আলীর দাবি, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলার ছোট ভাই মোহাম্মদ শফিউল আলম, পতেঙ্গা থানা যুবদল নেতা শাহিনের ভাই আলী নূর, আমিন শিল্পাঞ্চল সাংগঠনিক ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সুমনের বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ কবিরকে গ্রেপ্তার করে আদলতের মাধ্যমে কারাগারো পাঠানো হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে কাভার্ডভ্যানে আগুন : আজাদীর খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির আলুটিলা সড়কে সকাল পৌনে ১১টার দিকে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কাভার্ডভ্যানটির সামনের অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে এসময় কেউ দগ্ধ হয়নি।
মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া জানান, পণ্যবাহী পরিবহন সংস্থা ফাইভ স্টার এক্সপ্রেস সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়িতে আসছিল। আলুটিলা সড়কে উঠার সময় দুষ্কৃতকারীরা কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয়। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজা হচ্ছে।