সোমবার, বিকেল চারটা। নগরীর ইপিডেজ মোড়। সারি করে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য বাস। রয়েছে শতাধিক মোটরসাইকেলও। সবাই যাত্রীর খোঁজে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সিইপিজেডের কারখানাগুলো ছুটি হতে থাকে। বাসার উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকে অফিস ফেরতরা। পুরো নগরীতে লকডাউনের প্রভাব থাকলেও ইপিজেডের বে-শপিং সেন্টারের সামনের মোড়টিতে মনে হয়নি লকডাউন চলছে। পুরো দেড়ঘন্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করার কথা থাকলেও বাসগুলোতে শতভাগ যাত্রী বহন করা হয়েছে। ভাড়াও নেওয়া হয়েছে দ্বিগুণ। তবে পর্যাপ্ত বাস থাকার কারণে এ স্পটের যাত্রীদের আলাদা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। যাত্রীরা নির্ধারিত গন্তব্যে গেছেন কোন বাধা ছাড়াই।
গার্মেন্টস ছুটির পর দেখা গেছে, কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাসে চড়ে কর্মস্থল ত্যাগ করছেন। অন্য শ্রমিকদের বিরাট অংশ হেঁটে আশেপাশের বসবাসস্থলে যাচ্ছেন। বিকেল ৪টা বেজে ৪০মিনিট। চট্টমেট্রো-জ-১১-১৭৯৭ নম্বরের বাসটির হেলপার হাঁক দিচ্ছেন- ‘ফ্লাইওভার হয়ে বহদ্দারহাট ৩০ টাকা, ৩০ টাকা’। ওই বাসে বসা সাইফুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, স্বাভাবিক ভাড়া ১২ টাকা। প্রায় সবদিনেই বিকেল চারটা হলেই বাসগুলোর ভাড়া এমনিতেই ২০ টাকা হয়ে যায়। এখন করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সরকার স্বাস্থ্যবিধি ঘোষনা করে বাসে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এখানকার বাসগুলো তাা মানে না। ফলে বাধ্য হয়ে ৩০ টাকা ভাড়ায় উঠেছি। অথচ প্রত্যেক সিটেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।’
বিকেল ৫টা বেজে ২০ মিনিট। চট্টমেট্রো-জ-১১-১৯৭৪ নম্বরের গাড়িটির সামনে সাঁটানো প্রিন্ট কাগজে লেখা রয়েছে, ‘মাস্ক ছাড়া যাত্রী উঠা নিষেধ, দুই সিটে একজন বসবেন’। বাসটির হেলপার যাত্রী ডাকছেন- মাদারবাড়ি, লালদিঘী, কোতোয়ালী নিউ মার্কেট ভাড়া উঠানামা ২০ টাকা। এসময় ওই হেলপারের মাস্কটি থুতনীর সাথে ঝুলছিল। বাসটিতেও মানা হয়নি সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি। গাড়ির শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে ভাড়াও নেওয়া হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
শুধু ইপিজেড এলাকার শ্রমিকরা বাদেও নগরীর অন্য স্পটে থাকা গার্মেন্টস কারখানাগুলোতেও শ্রমিকদের যাতায়াতে তেমন ভোগান্তি না থাকলেও শুধু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি। তবে যেসব কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল তারা ছিল খোশ মেজাজে। আবার লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রাইভেট গাড়ির চলাচলে শিথিলতার সুযোগে যাদের প্রাইভেট কার, জিপ রয়েছে তারা খেয়াল খুশিমতো গিয়েছেন নিজেদের গন্তব্যে।
এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর জিইসি মোড়ে আসে ১০ নং রুটের একটি বাস। বাসটিতে কোন আসন খালি না থাকলেও আগ্রাবাদ ও বন্দর-কাস্টমসগামী লোকজন বাসটিতে চড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকে সিএনজি অটোরিকশা, টমটম, ব্যাটারিচালিত রিকশা, কিংবা প্যাডেল রিকশা করে বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শিপিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কাউছার আলম বলেন, ‘কোভিড শুরুর পর থেকে আমাদের অফিসে শিফট অনুযায়ী সকলেই অফিস করছেন। প্রত্যেকে দুইদিন অফিসে গেলেও সপ্তাহের অন্যদিন বাসা থেকে অফিসের কাজ সারছেন। এতোদিন স্বাভাবিক থাকায় অফিসে যেতে সমস্যা হয়নি। আজ নতুন করে লকডাউন ঘোষণার পর বাস চলাচল না করায় অফিসে যেতে সমস্যা হচ্ছে। জিইসি মোড় থেকে আগ্রাবাদ ৭০-৮০ টাকায় গেলেও আজকে দেড়শ টাকা দাবি করেছেন কয়েকজন। পরে আমরা দুইজন মিলে ১৩০টাকায় এসেছি।’
বিকেলে অফিস ছুটির সময়েও দেখা গেছে একই চিত্র। বিকেল পাঁচটার পর থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ছিল ঘরমুখো মানুষের জটলা। ইপিজেড থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো যাত্রী ভর্তি করেই নিউ মার্কেট কিংবা বহদ্দাাহটের নির্ধারিত গন্তব্যে যাচ্ছে। পথিমধ্যে গাড়িগুলো দাঁড়াচ্ছে না। আবার বিকেলে সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যাও ছিল কম। যে কারণে হেঁটে এবং বেশি ভাড়ায় রিকশা করে বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছেন যাত্রীরা। সাইফুল আলম নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার বাড়ি পটিয়ার কুসুমপুরা এলাকায়। প্রতিদিন বাসে আসা যাওয়া করি। এখন লকডাউন শুরুর কারণে বাস চলছে না। সকালে আসার সময় নতুন ব্রিজ থেকে দুইশ টাকায় আগ্রাবাদ এসেছি। এখন যাওয়ার জন্য কোন গাড়ি পাচ্ছি না। রিকশা দাবি করছে ১২০ টাকা।’