পাহাড়ি ঝরনার মুখে বাঁধ, সবুজ গাছের সমারোহ। নীল জলরাশি আর সবুজের অপার সুন্দর মীরসরাইয়ের বাওয়াছড়া লেক। নীল আকাশের নিচে সবুজ গাছগাছালি আর জলের উপর সবুজের ছায়ায় পুরো জলও যেন সবুজের সমারোহ। এক ভিন্ন রকম সুন্দর এই বাওয়াছড়া লেক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মীরসরাই উপজেলায় এই লেকের অবস্থান। শুধু লেক নয়, এখানে আছে হরিণমারা নামের একটি ঝরনা। উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট এটি। পাহাড়ি ঝরনার মুখে বাঁধ, সবুজ গাছের সমারোহ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ মুগ্ধ হবেন বাওয়াছড়া দেখে। এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
মীরসরাই উপজেলার ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত। অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দুপাশে সুউচ্চ পাহাড়। উচ্চ স্বরে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে পড়ছে লেকে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তেই আপনার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারো মনে নাড়া দেবে। যেন একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই! লেকে ছোট্ট একটি নৌকা আছে, সেই নৌকায় লেকে মনের আনন্দের ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় লেকের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান করছেন।
প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে পাহাড়ের ভেতরের অবস্থিত হরিণমারা, হাঁটুভাঙা ও আমতলি ঝরনায়। বর্ষায় শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বারমাসি ছড়ার মুখে তাই লেকটির নামকরণ করা হয়েছে বাওয়াছড়া লেক। এর মধ্যে সামান্য পথ ছাড়া বাকি পথ গাড়িতে যাওয়া যায়।
ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী ফয়সাল আলম জানান, আমি এখানে প্রথমবার এসেছি। অনেক সুন্দর জায়গা। তবে এখনো পর্যটন অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সরকার একটু নজর দিলেই এটি হবে চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়া এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরুরি।
তাবু টাঙিয়ে রাত কাটানো কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, বাওয়াছড়ায় দিনের বেলায় অনেকবার এসেছি। গত কয়েকদিন আগে বন্ধুরা মিলে এখানে ক্যাম্প করে রাত কাটিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ। সারা রাত লেকের পাড়ে হৈ–হুল্লোড়, খাওয়া–দাওয়াসহ বারবিকিউ উপভোগ করেছি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম পারভেজ বলেন, বাওয়াছড়া অনেক সুন্দর জায়গা। এ প্রকল্পকে ইকো ট্যুরিজমের আওতায় এনে যদি উন্নয়নমূলক কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এটি সম্ভাবনাময় একটি জায়গা হবে। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে কেউ যদি বাস্তবে না আসে তাহলে বুঝতে পারবেন না যে, জায়গাটা কতটুকু সুন্দর। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আরও পর্যটক আসবে।
কীভাবে যাবেন : দেশের যে কোনো জায়গা থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারের দক্ষিণে নেমে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে প্রকল্পের অবস্থান। সড়কের মূল প্রবেশ মুখে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যে কোনো ছোট গাড়ি নিয়ে প্রকল্প পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
থাকা ও খাওয়া : স্থানীয় কমলদহ বাজারে রয়েছে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল। যে হোটেলটি খাবারের জন্য উত্তর চট্টগ্রামে খুব জনপ্রিয়। তবে এখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান মোড় ও অলংকারে থাকার জন্য আছে মায়ামী রিসোর্ট ও রোজভিও।