মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যেমন ৪ জুলাই (১৭৭৬), ফ্রান্সের ইতিহাসে যেমন ১৪ জুলাই (১৭৮৯), তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ আগস্ট (২০২৪) তারিখটি সোনার হরফে, কিংবা বলা যায় রক্তের অক্ষরে লেখা থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সৈনিকেরা এ দিনটিকে নাম দিয়েছে ‘৩৬ জুলাই’। অভূতপূর্ব সব শব্দ ওদের ভাবনাজুড়ে। বাংলাদেশের সমাজ মানসে তাদের উদ্ভাবিত নতুন শব্দমালা জায়গা করে নিয়েছে অবলীলায়। একই সঙ্গে একথাও সত্য যে, এ বছরের মতো দীর্ঘতম জুলাই জাতির জীবনে আর আসেনি। ত্রিকালদর্শী অশীতিপর যাঁরা আছেন, বলছেন, তাঁদের জীবনেও কোনো মাস এতো দীর্ঘসময় নিয়ে আসেনি। মাসের প্রথম দিন থেকেই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে নেমে আসে নিদারুণ স্থবিরতা। শিক্ষকদের কর্মবিরতি আর শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন শুরু হয় অল্পসময়ের ব্যবধানে। শিক্ষকরা লড়েছেন মর্যাদাহানি ও আর্থিক অবনমনের বিরুদ্ধে আর শিক্ষার্থীরা বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথার বিরুদ্ধে।
মধ্য জুলাই–এ শুরু হয় রক্তপাত। বিরতিহীনভাবে চলে টানা চারটি সপ্তাহ। সরকার পতনের পর মাস গড়িয়ে গেলেও নৃশংসতার নতুন নতুন খণ্ড চিত্র অবমুক্ত হচ্ছে গণমাধ্যমে। পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে অর্ধমৃত যুবকের দেহ নিক্ষেপ পরবর্তী বর্বরতা ইহুদীদের প্রতি হিটলারের এবং ফিলিস্তীনিদের প্রতি ইসরাইলের নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। দুই বোনের কাঁধে কিশোর ভাইয়ের লাশের ছবি কাঁদিয়েছে মানুষকে। সন্তানের লাশ মনে করে বিকৃত পোড়া লাশ দাফন করার পর কয়েকদিন পর বাবা মা জানতে পারেন তাঁদের সন্তান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে হাসপাতালে। তাহলে পোড়া লাশটির কী পরিচয়? তার বাবা মা কে? তাঁরা কি জানেন তাঁদের সন্তানের পরিণতির কথা? একবার ভাবুনতো – গুলিবিদ্ধ ছাত্র জনতাকে চিকিৎসা গ্রহণে বাধা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার নারকীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা রাজনৈতিক ও আইনের কর্মীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন, সন্তান সন্ততির সঙ্গে পারিবারিক সময় অতিবাহিত করবেন! এসব কি কোনো সভ্য সমাজের গল্প হতে পারে? আমরা কত সহজেই না তার বর্ণনা দিয়ে ফেলতে পারি!
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ তে মার্চের প্রথম সপ্তাহের চিত্র আঁকতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলার ঘরে ঘরেই কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কত মা ফাতেমার বুকের মানিক, কত বিবি সখিনার নওজোয়ান স্বামী পথে প্রান্তরে গুলি খেয়ে ঢলে পড়েছে– বাংলার ঘরে এখন প্রতিদিনই আশুরার হাহাকার, মর্সিয়ার মাতম’। উদ্ধৃত অনুচ্ছেদটি যেন ২০২৪ এর জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রতিচ্ছবি। কাকতালীয়ভাবেই এবার জুলাই আর মহররম পাশাপাশি চলছিল। রক্তাক্ত জুলাই নিয়ে অভিজ্ঞজনের অভিমত, একশ বছরের ইতিহাসে এতো কম সময়ে এতো রক্তপাত পৃথিবী দেখেনি। যুদ্ধ ছাড়া এমন রক্ত আর ধ্বংসও পৃথিবী আগে দেখেননি। রক্তপাত আজও পুরোপুরি থেমেছে বলা যায় না। যারই রক্ত ঝরুক, যারই প্রাণ যাক, সে যে দলের মতেরই হোক না কেন, কোনো না কোন মায়ের সন্তান–ঠিক এই কথাটা আমাদের অনেকেই মনে রাখতে চায়না। আমাদের আজকের আচরণ বলে দেয় রক্তাক্ত জুলাই আগস্টের কথা আমরা তখনই স্মরণ করি, যখন শত শহীদের নাম ভাঙিয়ে আমাদের কিছু একটা পাওয়ার থাকে, ঠিক যেমন করে বিগত তিপ্পান্ন বছর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চিত হয়েছিল অনেক দাম দিয়ে কেনা এই বাংলাদেশে। আমরা নিজেদের প্রয়োজনেই বিশেষ বিশেষ দিনে উৎসবের আমেজ নিয়ে শহীদদের স্মরণ করি। এই আত্মপ্রবঞ্চনার নির্মমতা উপলব্ধি করার মতো বোধবুদ্ধি আমাদের লোপ পেয়েছে অনেক আগে।
পালাবদলের ক্রান্তিলগ্নে ঘটে যায় নানা অনভিপ্রেত ঘটনা, যদিও ইতিহাসের বাদবাকি বিপ্লব পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের তুলনায় তাকে হয়তো আমরা নগণ্যই বলতে পারি। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে তার অনেকটাই এড়ানো যেত। আমরা তা করিনি, করতে চাইনি। আমরা ইতিহাস চর্চা করি, ইতিহাসের উদ্ধৃতি দেই, ইতিহাসকে ব্যবহার করি শুধুমাত্র নিজ নিজ কার্যসিদ্ধির প্রয়োজনে। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে একটা বহুল উচ্চারিত শ্লোগান ছিল– রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়। পটপরিবর্তনের হাত ধরে অনেক কিছু বদলালেও অন্যায় ভেসে যেতে দেখা যায়না, বরং আরও জাঁকিয়ে বসার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কোন অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষ নয়, আমাদের শিক্ষিত বিত্তবান সম্প্রদায়ই এসকল অন্যায়ের রসদ যুগিয়ে চলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে চলমান অরাজকতা ও সহিংসতা দেখে প্রতীয়মান হয় যে পরিবর্তন প্রত্যাশীদের অনেকে পরিবর্তনটা চেয়েছিলেন নিজেদেরকে সর্বোচ্চ অবস্থানে দেখবার প্রত্যাশায়। দিন বদলের সুযোগে যে যার আখের গুছিয়ে নেওয়ার জন্য মরণ খেলায় নেমেছেন, সহযাত্রী, সহকর্মী, সহপাঠী এমনকি শিক্ষকের চরিত্র হননের মধ্য দিয়ে যার সূচনা। মাসাধিক কাল ব্যাপী চলছে এই খেলা, যেখানে প্রতিনিয়ত ঘি ঢেলে চলেছেন সুযোগসন্ধানীগণ। বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, দীর্ঘকাল ধরে প্রবাসে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশীও যে যার মত পথের আলোকে এই খেলায় অংশ নিচ্ছেন। পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মানুষদেরকে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজ পরিণত হয়েছে ঘৃনা ছড়ানোর যন্ত্রে, বিভেদ বাড়ানোর মন্ত্রে।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা তিন মাস অচলাবস্থা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবং শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে লেখাপড়ায় বড় ধরনের একটা ছেদ পড়ে যায় সকলের। রাজনৈতিক পালাবদল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠানকে কার্যত অচল করে দেয়। দিনের পর দিনতো এভাবে চলতে পারে না। এখন ঘরে ফেরার সময়, এখন সময় পড়ায় ফেরার। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা মাস দুই আগে অসীম সাহস ও স্বপ্ন নিয়ে সব বদলে দেওয়ার শপথ নিয়েছিল, আন্দোলনের অব্যবহিত পরেই যারা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্রাণের ভয় তুচ্ছ করে দুর্গতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিল, তাদের অনেকের আচরণ দেখে মনে হয় তারা আর ঘরে ফিরতে চায় না, পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার কোন আকাঙ্ক্ষাও তাদের নেই। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মতো ঘুরে ঘুরে জনসংযোগ করছে তারা। তাদের মুখের ভাষা, চোখের ভাষা আগের মতো আশাবাদী করে না, বরং আতংকিত করে তোলে। তাদের অনুসারীর সংখ্যাও কম নয়, যারা নিজ নিজ কাজ ফেলে প্রতি মুহূর্তে আক্ষরিক অর্থেই ‘রাজা উজির মারা’ র কাজে নিয়োজিত। কেউ কেউ আবার অতিবিপ্লবীর ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়, আইন হাতে তুলে নেয়, প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়– বেশির ভাগ মানুষই নিজ নিজ কাজ ফেলে একেক জন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বনে যান, এবং সরকারের খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শ দেন।
ইতিহাস বলে, আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে, তার কোনোটাই অবান্তর নয়। উনিশ শতকের শেষার্ধ হতে পরাশক্তিদের উপনিবেশ ও জাতীয়তাবাদ বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে ব্যাপক উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান অস্ত্রভাণ্ডার, সর্বোপরি বিশ্বনেতাদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে ভাগ হয়ে চলার পরিণতি হিসেবে বিশ শতকের প্রথমার্ধে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে ওঠে তখন সেকালের বিশ্বমোড়লেরা বলেছিলেন, এ যুদ্ধ হবে বিশ্বে চিরকালের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করার যুদ্ধ। একই কথা বলছেন আজকের মোড়লরাও। ফিলিস্তীনে ইহুদী আগ্রাসনের পক্ষে অনঢ় অবস্থানে তাঁরা শতবছর ধরে। পশ্চিম ইউক্রেনের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার আগ্রাসন থামছে না পূর্ব ইউরোপে। কোথাও যুদ্ধ শেষ হয় না, বরং নতুন করে দানা বাঁধে। যে প্রাচ্য থেকে একদিন সভ্যতার সূচনা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ, সে প্রাচ্যকে অশান্ত রেখে পশ্চিমে গড়ে ওঠে মানবতা ও শান্তির জনপদ। প্রাচ্যবাসী তবু দিন ফেরাতে পশ্চিমের কাছ থেকেই দয়া ভিক্ষা করে। এ যেন এক চিরন্তন প্রহসন, এক অমীমাংসিত রহস্য। ইতিহাসের গোলকধাঁধা এই যে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়, কারণ মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। উল্টো করে বলা যায় – মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না বলেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় যুগে যুগে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, এও এক চরম সত্য। ইতিহাসের কাজ সত্য অনুসন্ধান করা, সত্য প্রকাশ করা, ন্যায় অন্যায়ের বিচার করা নয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সকল অন্যায়েরই বিচার হয়, কোনোটা দেখা যায়, কোনোটা দেখা যায় না– এটাও ইতিহাসেরই সত্য। ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’– নজরুলের এই উক্তি ইতিহাসের অবশ্যম্ভাবী পরিণতির সাক্ষ্য দেয়। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা অপশাসনের অবসান এভাবে হবে, কেউ কি ভেবেছিল? আমাদের অকুতোভয় ছাত্রজনতা সেই অসাধ্য সাধন করেছে। এখন সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সেই বিজয় ছিনতাই হয়ে গেলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব আবারও হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের মনে রাখতে হবে যুগে যুগে বিপ্লবের ধ্বংসাবশেষ থেকেই পুনর্জন্ম লাভ করে নব্য স্বৈরাচার। তাই ইতিহাস থেকেই আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তবে ইতিহাস চর্চা অর্থহীন হয়ে পড়বে। রাজবন্দনা কোনো ঐতিহাসিকের কাজ হতে পারে না।
নতুন বাংলাদেশে ৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে আশা নিরাশায় দুলতে থাকি। ক্ষণে ক্ষণে চুপসে যায়, পরক্ষণে নতুন হাওয়ায় প্রাণ পায় আশার বেলুন। পটপরিবর্তনের নাটকীয়তা এবং তৎপরবর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নানান চোখ দিয়ে দেখি; কখনো সাধারণ নাগরিক, কখনও ইতিহাসের শিক্ষার্থী আবার কখনওবা মায়ের চোখ। একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে যুক্তিতর্ক; সব ছাপিয়ে প্রার্থনাতেই শান্তি খোঁজার চেষ্টা। তিপ্পান্ন বছরের বাংলাদেশ আজ বড় ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত। আমরা কেবল দেড় দশকের দুঃশাসন নিয়ে কথা বলে দায় এড়াতে পারবো না। ইতিহাস বলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিগত তিপ্পান্ন বছরে বাংলাদেশে সমতা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দেয়নি। দেশের জন্য হতদরিদ্র কৃষক শ্রমিকসহ সাধারণ পেশাজীবীদের সন্তান প্রাণ দেবে, আর অভিজাত রাজপরিবারের সন্তানরাই পালা করে ক্ষমতা গ্রহণ করে নাগরিকদেরকে প্রজা বানিয়ে দাবিয়ে রাখবে– এই ধারার অবসান হোক।
উপসংহারে ফিরে যাই ইতিহাসেরই কাছে। ইতিহাস বলে, বিপ্লব কখনও সর্বাঙ্গীন সফল হয় না। তাই বলে বিপ্লব ব্যর্থ হয় – একথাও বলা যায় না। ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ আপন গতিতেই চলে। ইতিহাসে রঙ ছড়ানোর মতো নির্বুদ্ধিতা আর নেই। উত্থান পতনের জাগতিক হিসেব নিকেশের নিক্তিতে ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না। ইতিহাস কোন রূপকথাও নয়। তাই ‘অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল’– বলে ইতিহাসের যবনিকা টানা যায় না। ইংরেজ ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলান বলেন– ‘পৃথিবীর দিন বদলে নেতৃত্ব দেবে ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা’। জাতির ক্রান্তিলগ্নে খ্যাতিমান চিন্তাবিদ ও ইতিহাসবেত্তাগণের অস্বাভাবিক নীরবতা আমাদেরকে স্তব্ধ করে দিলেও এবারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্তরালে থেকে যারা দার্শনিক ভিত্তি তৈরি করেছিল তাদের চিন্তা চেতনায় ইতিহাস সচেতনার প্রতিফলন দেখা যায়। সে ইতিহাস কেবল আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের খণ্ডিত ইতিহাস নয়, বরং মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি বিশ্বসভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের ইতিহাস। পূর্বসুরীদের মতো পরিণত বয়সে ডানে বামে হেলে না পড়ে সোজা ও সত্য পথে এগিয়ে যেতে পারলে অপার সম্ভাবনাময় আমাদের বাংলাদেশকে পশ্চিম কিংবা কোনো পরাশক্তির দাবার গুটি হয়ে থাকতে হবে না। এখন প্রশ্ন, আমরা ওদেরকে সোজা পথে চলতে দেব কি না?
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।