অপারেশনের পর পেটে স্যালাইনের লম্বা পাইপ ৫ বছর!

দায় নিতে রাজি নন চিকিৎসক

আজাদী অনলাইন | বৃহস্পতিবার , ১৮ মার্চ, ২০২১ at ৫:২২ অপরাহ্ণ

কিডনিতে পাথর জটিলতা নিয়ে ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। অপারেশন শেষে বাড়িও ফিরে যান।
প্রথম কয়েকমাস কোনো সমস্যা না হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পেটের ব্যথা। সর্বশেষ তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে গেলে পাঁচ বছর পর একই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। পরে এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পড়ে রোগীর পেটে রয়ে গেছে স্যালাইনের লম্বা পাইপ সদৃশ ‘অস্বস্তিকর বস্তু’। বাংলানিউজ
এমন ঘটনা ঘটেছে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে অবস্থিত ‘চিটাগং ইউরোলজি অ্যান্ড জেনারেল হসপিটাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন ইউরোলজিস্ট ও অ্যান্ড্রোলজিস্ট ডা. মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন। বেসরকারিভাবে চিটাগং ইউরোলজি অ্যান্ড জেনারেল হসপিটালে চেম্বার করলেও তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই চিকিৎসকের কাছে জাহাঙ্গীর আলমের কিডনির পাথর সরাতে করা অপারেশনের সময় এমন ঘটনা ঘটলেও এর দায় নিতে রাজি নন ঐ চিকিৎসক। উল্টো ঐ রোগী এবং তার স্বজনদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয় গত ২১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার অপারেশন করেও পুরোপুরি বের করা যায়নি সেই বস্তুটি।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “২০১৫ সালে একবার অপারেশন করা হয়। ঐ সময় আমার পেটে একটি পাইপ রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসক। অপারেশনের পর কিছুদিন ভালো থাকলেও গত দুই তিন মাস ধরে আমার পেটে ব্যথা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঐ চিকিৎসকের কাছে আবারও গেলে তিনি এক্স-রে করান। সেখানে ধরা পড়ে পেটের ভেতর পাইপ রয়ে গেছে। চিকিৎসকের ভুল থাকলেও ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে দ্বিতীয়বার অপারেশন করানো হয়। দ্বিতীয়বার অপারেশন করার পর আবারও একটি এক্স-রে করলে দেখা যায়, আমার পেটে পাইপের বেশ কিছু অংশ রয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি উল্টো আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে আমার পরিবার নিয়ে গালিগালাজ করেন।”
রোগীর বড় ভাই আবুল হোসেন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি। উল্টো ঐ চিকিৎসক চিকিৎসা না করে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।”
রোগীর বড় ভাই আরও বলেন, “ভাইয়ের অপারেশনের জন্য অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করেছি। মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। ঐ চিকিৎসক টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। দ্বিতীয়বারের অপারেশনের আগে তিনি ২০ হাজার টাকায় অপারেশন করবেন বলেছিলেন কিন্তু আমার ভাইকে অপারেশনের টেবিলে রেখে তিনি ৩০ হাজার টাকা না হলে অপারেশন করবেন না বলে জানান।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. জাহাঙ্গীর হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ডাবল এফসিপিএস। আপনি সাংবাদিক, আপনার কাজ করেন। আমাকে আমার কাজ করতে দেন।”
তিনি বলেন, “কিডনি অপারেশন করলে সেখানে স্ট্যান্ট দিয়ে আসতে হয়। আমি স্ট্যান্ট দিয়ে এসেছি। ঐ স্ট্যান্টটা এক মাসের ভেতর খুলে ফেলতে হয়। বিষয়টি হাসপাতাল থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে লেখা রয়েছে কিন্তু তারা তা না করে ৫ বছর পরে আমার কাছে এসেছে।”
এদিকে, হাসপাতাল থেকে পাওয়া ছাড়পত্রে দেখা যায়, এক মাস পর হাসপাতালে এসে স্ট্যান্টটি খুলে দেওয়ার কথা কোথাও উল্লেখ নেই।
বিষয়টি নিয়ে গত ১০ মার্চ নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী রোগী। বিষয়টির তদন্ত করছেন এই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম। এ বিষয়ে এসআই মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৬
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে ইউপি সদস্য সমর হত্যায় জড়িত সন্দেহে যুবক আটক