অপরূপ সৌন্দর্যের ডোমখালী সমুদ্রসৈকত

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

অপূর্ব সুন্দর সমুদ্রসৈকত, সবুজের সমারোহ, ঝিরিঝিরি হাওয়া, লাল কাকড়ার লুকোচুরি, ঢেউয়ের কলতান, নৌকা ভ্রমণ। এমন এক স্থান যেখান থেকে সমুদ্র, সারি সারি গাছগাছালি, রক্তিম সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখা যায়। বলছি, মীরসরাই উপজেলায় অবস্থিত ডোমখালী সমুদ্রসৈকতের কথা। উপজেলার সর্বদক্ষিণপশ্চিমে ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নে এটির অবস্থান। সময় পেলেই ভ্রমণপিপাসুরা পরিবারপরিজন ও বন্ধুবান্ধবসহ সেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন। ঘুরতে আসা লোকজন এমন মনোরম দৃশ্য দেখে যেমন বিমোহিত হচ্ছেন; তেমনি আবার হতাশ হতে হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা প্রশাসনের উদাসীনতায়। দর্শণার্থীদের জন্য নেই কোনো বসার স্থান। যাতায়াতেও আছে ঘাটতি।

বেড়িবাঁধ সড়কের ওপর পৌঁছেই দেখতে পাবেন বিশাল সাগর, দখিনা বাতাস আর সবুজ প্রকৃতি। প্রকৃতি ঘেরা অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধ করছে ডোমখালী বিচে আসা ভ্রমণপিপাসুদের। এখানে কান পাতলে শোনা যায় বিশাল সমুদ্রের গর্জন। নির্মল বাতাস শরীর ও মনকে করে তুলবে শীতল। সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে তাকালে দেখা যায় দিগন্ত বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সেই মাঠে আপন সুখে কাজ করছেন কৃষক। শেষ বিকেলে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের পাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রাখাল। বেড়িবাঁধ সড়কের দুধারে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ ও সারি সারি বৃক্ষ। আছে খেজুর, নারকেল, তাল, ঝাউ, সেগুন, আকাশমণি, নিম, বাউল, বাবলাসহ অসংখ্য গাছ।

যদি শীতের মৌসুমে যান, তাহলে খেজুরের মিষ্টি রসের স্বাদও নিতে পারবেন। সড়কের দক্ষিণে কেওড়া, বাইন, গড়ান, গেওয়া, সুন্দরী, হারগোজসহ লবণাক্তসহিষ্ণু নানা বৃক্ষ, লতা ও গুল্মযা এলাকাটিকে সবুজের সমারোহে পরিণত করেছে। যেদিকে তাকাবেন, শুধু সবুজ আর সবুজ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিমে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকত। সাগরের কোলজুড়ে গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ বন। এই বনভূমিতে আছে জীববৈচিত্র্যের সমাহার।

বনে দেখা মিলবে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, কোকিল, চিল, ডাহুক, সাপ, লজ্জাবতী বানর, মেছো বাঘ, কুমির, হরিণ, শিয়ালসহ বিরল ও মহাবিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ ও প্রজনন। খুব ভোরে ও সন্ধ্যাবেলায় ঘাস ও লতাপাতা খাওয়ার জন্য বনভূমির বাইরে চরাঞ্চলে চলে আসে হরিণের দল। দিনের বেলায় বনের ভেতর প্রবেশ করলে হরিণের পদচিহ্ন ও আনাগোনা লক্ষ করা যায়। বনের মধ্যে খাবারের খোঁজে মহিষের দল চরে বেড়ায়। বনের মধ্যে আরও শুনতে পাবেন পাখিদের কলকাকলির শব্দ। বন শেষ হলে শুরু হয় কাদামাটি।

সাগরের খুব কাছে জোয়ারের সময় ডুবে থাকা জায়গাগুলোয় ভাটার সময় ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে লাল কাঁকড়া, সাগরের বিভিন্ন জাতের কাঁকড়া ও সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ মাথা তুলে বসে থাকে ও ছোটাছুটি করে। মানুষের আনাগোনা পাওয়া মাত্রই গর্তে ঢুকে পড়ে। বিকেলের সময়ে নানা বয়সের মানুষের আগমনে ভিড় জমে সাগরপাড়ে। সমুদ্রের পানির ছোঁয়া দূর করে তাদের মনের ক্লান্তি। ঘাটে বাঁধা থাকে বাহারি রঙের ডিঙিনৌকা। জেলেরা মাছের জাল তুলতে সাগরে ছুটে চলেন। কেউ আবার সমুদ্রের নানা প্রজাতির তাজা মাছ নিয়ে ঘাটে নৌকা ভেড়ান। এই মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে।

অনেক নৌকা ভ্রমণপ্রেমিক জেলেনৌকা নিয়ে পাড়ি দেন সাগরের মোহনায়। জেলেপল্লীর পরিবারের বড়দের সঙ্গে ছোটরাও মাছ ধরতে সাগরে যায়। দুষ্ট ছেলেরা সাগরের পানিতে লাফালাফি করে। বিকেলে সমুদ্রের পাড় থেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য অবলোকনের মাধ্যমে সমুদ্রের সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটান ভ্রমণপিপাসুরা।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতে কথা হয় ফেনী থেকে আসা দর্শণার্থী হাসিবুল হকের (৩২) সাথে। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এসেছি। সবাই মার্কেটিংয়ে কাজ করি। একটু অবসর পেয়ে সৈকতটা দেখতে এসেছি। এখানের প্রাকৃতিক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে, কিন্তু হতাশও হয়েছি। এখানে বসার জন্য কোনো বেঞ্চ নেই। পাথরও নেই যেএকটু বসে প্রকৃতি উপভোগ করবো।

কীভাবে যাবেন : দেশের যেকোনো স্থান থেকে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগারহাট বাজারে নেমে সিএনজি টেক্সি যোগে যেতে হয় ডোমখালী বেড়িবাঁধ। মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। বড় দারোগারহাট বাজার থেকে বায়ান্নবাঁকের গ্রামবাংলার মেঠো পথ ধরে বেড়িবাঁধ সড়কের ওপর গিয়ে গাড়ি থামে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাত না থাকায় পৌরবাসীর দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিভিন্ন স্থানে র‌্যালি ও সমাবেশ